Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকথাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে শান্তি চুক্তি: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বন্ধ সংঘাত

থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে শান্তি চুক্তি: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বন্ধ সংঘাত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাত অবশেষে শেষ হলো একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে। এই উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক মহলে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রবিবার এশিয়া সফরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থেকে “কুয়ালালামপুর শান্তি চুক্তি” স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। থাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া ও মালয়েশিয়ার নেতারা একসাথে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে, যার মূল বার্তা ছিল “Delivering Peace” — অর্থাৎ শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।

চলতি বছরের জুলাই মাসে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় সংঘাতের সূত্রপাত হয়, যা টানা পাঁচ দিন ধরে চলে। এই সংঘাতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। উভয় দেশের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, থাইল্যান্ড তাদের হাতে আটক ১৮ জন কাম্বোডিয়ান সেনাকে মুক্তি দেবে। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের (ASEAN) পর্যবেক্ষক দল মোতায়েন করা হবে সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, যিনি আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান, এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, “বিশ্ব আজ এমন নেতাদের প্রয়োজন যারা সাহসের সাথে শান্তিকে অগ্রাধিকার দেয়।”

কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীও মার্কিন প্রশাসনের “অবিরাম প্রচেষ্টা”র প্রশংসা করেন এবং পুনরায় প্রতিশ্রুতি দেন যে এই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে তার সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তিকে “দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি” হিসেবে উল্লেখ করেন।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর, যুক্তরাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কাম্বোডিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর শুল্ক বাতিল করেছে, আর থাইল্যান্ড ৯৯% মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের পণ্যের ওপর ১৯% আমদানি শুল্ক বজায় রাখবে।

এছাড়া মালয়েশিয়ার সাথেও যুক্তরাষ্ট্র নতুন বাণিজ্য চুক্তি করে, যেখানে দেশটি তাদের শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা সংশোধন করতে সম্মত হয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা ইলেকট্রনিকস ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য।

চীন বর্তমানে এই খনিজ সম্পদের প্রক্রিয়াজাতকরণে বৈশ্বিকভাবে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষিতে চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তের পর বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই চুক্তিগুলো শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং নিরাপত্তার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। “আমাদের জনগণ ও অর্থনীতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্ভরযোগ্য সাপ্লাই চেইন গঠন এখন সময়ের দাবি,” বলেন তিনি।

মালয়েশিয়া সফর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এশিয়া সফরের প্রথম ধাপ। এরপর তিনি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করবেন। সফরের অংশ হিসেবে তিনি আসিয়ানের বার্ষিক সম্মেলনেও যোগ দেবেন, যেখানে পূর্ব তিমুরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য হিসেবে স্বাগত জানানো হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতির পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পুনরায় সক্রিয় ভূমিকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বলেন, “এটি একটি স্পষ্ট বার্তা— যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে এসেছে এবং অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান নিতে প্রস্তুত।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments