আগামী বছর জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন কপ৩১ আয়োজনের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে পেয়েছে তুরস্ক। বহু আলোচনা ও মতবিনিময়ের পর এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়েছে, বিশেষত অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে যৌথ আয়োজক হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার প্রেক্ষাপটে। তবে শুধু আয়োজক হিসেবেই নয়, এই সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে কৌশলগত আলোচনার নেতৃত্বও পালন করবে অস্ট্রেলিয়া। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে যে দীর্ঘ টানাপড়েন ছিল তা প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত চলমান কপ৩০ সম্মেলনের অবকাশে এক সমঝোতার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, দুই পক্ষের আলোচনার পর যে কাঠামোতে উপনীত হওয়া গেছে তা বহুদিনের অচলাবস্থা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০২২ সালে তুরস্ক এবং অস্ট্রেলিয়া আলাদা আলাদাভাবে কপ৩১ আয়োজনের আবেদন করেছিল এবং তখন থেকে উভয় দেশই নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিল। কোনো পক্ষই আপস করতে আগ্রহ দেখায়নি। সেই অনিশ্চয়তার সমাপ্তি ঘটিয়েই এবার তুরস্ককে আয়োজক এবং অস্ট্রেলিয়াকে দরকষাকষিতে নেতৃত্বদাতা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার সরকারপ্রধান জানান, দুই দেশের মধ্যে যে নতুন সমঝোতা তৈরি হয়েছে তার আওতায় তুরস্ক সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবে এবং সম্মেলনের আগে যে বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক ও আঞ্চলিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় তা হবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। এই পূর্ব প্রস্তুতির বিভিন্ন বৈঠকে অস্ট্রেলিয়া নেতৃত্ব দেবে এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতিগত সমন্বয় করবে। আন্তর্জাতিক পরিসরে জলবায়ু কূটনীতিতে অস্ট্রেলিয়া যে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আগ্রহী, এই ব্যবস্থাপনা সেই প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত করবে।
একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, এই সমঝোতা দুই দেশের জন্যই একটি বড় অর্জন। তার ভাষায়, দীর্ঘ নিষ্পত্তিহীনতার পর উভয় পক্ষ এমন একটি অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে যা শুধু কপ৩১ নয়, জলবায়ু ইস্যুতে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার পথও উন্মুক্ত করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে তুরস্কের আয়োজকত্ব এবং অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক নেতৃত্বের সমন্বয় আগামী বছরের সম্মেলনকে আরও ফলপ্রসূ করে তুলবে।
এদিকে, নতুন সিদ্ধান্তের পর উভয় দেশকে মাত্র এক বছরের কম সময়ে বিশাল এই আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। কপ সম্মেলনে সাধারণত কয়েক হাজার অংশগ্রহণকারী উপস্থিত থাকেন। বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিনিধি, নীতি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিজ্ঞানী এবং নাগরিক সংগঠনগুলো জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক জলবায়ু নীতি প্রণয়নের ভিত্তি তৈরি হয়। ফলে কপ৩১ আয়োজন ও পরিচালনা উভয় দেশের জন্য বিরাট দায়িত্বের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের কূটনৈতিক সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি বড় সুযোগও বয়ে আনবে।
তুরস্কের আয়োজকত্ব নিশ্চিত হওয়ায় দেশটির কূটনৈতিক পরিসরে এটি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া আঞ্চলিকভাবে যে জলবায়ু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, এই আয়োজন সেই অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী বছরের কপ৩১ তাই শুধু একটি বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন নয়, বরং তুরস্ক ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি কৌশলগত আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই বিবেচিত হবে।



