রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের একজন ডিলারের গুদাম থেকে ১০৭ বস্তা টিএসপি সার জব্দ করেছে প্রশাসন। নিয়মবহির্ভূতভাবে সার মজুত রাখার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই ডিলারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। গতকাল রোববার বিকেলে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ডাঙ্গীরহাট বাজারে পরিচালিত এ অভিযানে স্থানীয় কৃষকদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গুদামে পর্যাপ্ত সার থাকা সত্ত্বেও কৃষকদের কাছে তা সরবরাহ করা হচ্ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে। কয়েকজন কৃষক জানান, ডিলার ইচ্ছাকৃতভাবে সার আটকে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন যাতে বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং গুদামে তল্লাশি চালান। তল্লাশিতে ১০৭ বস্তা টিএসপি সার মজুত অবস্থায় পাওয়া যায় যা নিয়মবহির্ভূত বলে প্রাথমিক তদন্তেই নিশ্চিত হন নির্বাহী কর্মকর্তা।
সার ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৬ এর সংশ্লিষ্ট ধারার আলোকে ডিলারের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। একই সঙ্গে জব্দ করা সারের বস্তাগুলো সেখানে উপস্থিত কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। সেসব বস্তা বিক্রি থেকে প্রাপ্ত মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে। স্থানীয় কৃষকদের অনেকে জানান, এমন অভিযানের ফলে তারা ন্যায্য মূল্যে সার পেয়েছেন যা তাদের চলমান আবাদে বড় সহায়তা করবে।
অভিযানের আরেকটি অংশে একই ইউনিয়নে বিসিআইসি অনুমোদিত আরেকজন ডিলারের বিরুদ্ধেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া যায়। কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ওই ডিলারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সার বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম বা কৃষককে হয়রানির বিষয় প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত অভিযানের মধ্য দিয়ে কৃষি খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ অব্যাহত আছে। তিনি জানান, সার বিতরণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও সঠিক প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার এবং সেই লক্ষ্যেই উপজেলা প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরও বলেন, যারা কৃষকের প্রয়োজনকে পুঁজি করে অনিয়মে জড়াবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতেও এমন অভিযানের পরিধি বাড়ানো হবে যাতে মাঠপর্যায়ে কৃষকরা কোনো ধরনের সংকটে না পড়েন।
স্থানীয় কৃষকরা প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সার নিয়ে সংকট তৈরি হলে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং তাদের লোকসানের ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য এমন নজরদারি ও আইন প্রয়োগের উদ্যোগ তাদের জন্য বড় স্বস্তির বিষয়। কৃষকদের দাবি, গুদামে সার মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার প্রবণতা রোধে প্রশাসনের এধরনের সক্রিয় ভূমিকা নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন।
এ অভিযান এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা স্থানীয় বাজারে সার ব্যবস্থাপনায় একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। কৃষকদের স্বার্থকে কেন্দ্র করে নেওয়া এসব সিদ্ধান্ত কৃষি উৎপাদন ও বাজার স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



