Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যতরুণদের মধ্যে ক্যান্সার বাড়ছে: আসলেই কতটা উদ্বেগের কারণ?

তরুণদের মধ্যে ক্যান্সার বাড়ছে: আসলেই কতটা উদ্বেগের কারণ?

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তরুণদের মধ্যে নতুন ক্যান্সারের কেস বেড়ে চলেছে, যা রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হলো উন্নতমানের এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং, যার ফলে ক্যান্সার অনেক আগেই ধরা পড়ছে। যদিও নতুন কেসের সংখ্যা বেড়েছে, তবুও মৃত্যুহার তরুণদের মধ্যে তেমন পরিবর্তিত হয়নি।

সোমবার প্রকাশিত একটি গবেষণায় গত তিন দশকের ক্যান্সার শনাক্তকরণ হার ও ৫০ বছরের নিচে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দ্রুত বাড়তে থাকা ক্যান্সারের মৃত্যুহার তুলনা করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, আটটি ক্যান্সারের মধ্যে কেবল দুটি—কোলোরেক্টাল এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে মৃত্যুহার বেড়েছে। অন্য ক্যান্সারগুলোর মধ্যে ছিল থাইরয়েড, অ্যানাল, প্যানক্রিয়াস, কিডনি, মায়েলোমা এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্যান্সার। যদিও স্তন ক্যান্সার এবং কিডনি ক্যান্সারের ঘটনা বেড়েছে, তবুও মৃত্যুহার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্রাস পেয়েছে।

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বছরের নিচে নারীদের মধ্যে ইনভেসিভ ব্রেস্ট ক্যান্সারের হার প্রতি বছর গড়ে ১.৪% হারে বেড়েছে। একই সময়ে ৫০ বছরের নিচে প্রাপ্তবয়স্কদের কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের হার বেড়েছে ২.৪% হারে। যদিও শনাক্তকরণ বেড়েছে, তবে মৃত্যুহার অর্ধেকে নেমে এসেছে, কারণ দ্রুত শনাক্তকরণ ও আধুনিক চিকিৎসা যেমন ইমিউনোথেরাপি কার্যকর হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, আধুনিক স্ক্রিনিং প্রযুক্তি ও কম বয়সে স্ক্রিনিং শুরু করার সুপারিশের কারণে অনেক টিউমার প্রাথমিক পর্যায়েই ধরা পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে এমনও ক্যান্সার ধরা পড়ছে, যা হয়তো কখনো মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করত না।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, চিকিৎসকেরা যত বেশি পরীক্ষা করবেন, তত বেশি ক্যান্সার খুঁজে পাবেন। বাস্তবে নতুন ক্যান্সার হঠাৎ করে বাড়েনি, বরং আগেই থাকা ক্যান্সার এখন সহজে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে থাইরয়েড ও কিডনির ক্ষেত্রে এই প্রবণতা স্পষ্ট।

আরেকজন চিকিৎসক জানান, বাড়তি “ডায়াগনস্টিক স্ক্রুটিনি” বা নিবিড় পরীক্ষার ফলে ক্যান্সার শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে। উন্নত পরীক্ষার ফলে অতি ক্ষুদ্র অস্বাভাবিকতাও ধরা পড়ছে, যা আগে অজানা ছিল।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের বয়সসীমা ৫০ থেকে কমিয়ে ৪০ করা হয়েছে। একইভাবে, ২০২১ সালে কোলন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের বয়স ৫০ থেকে নামিয়ে ৪৫ করা হয়, কারণ ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার কিছুটা বেড়েছিল।

তবে শুধুমাত্র উন্নত স্ক্রিনিংকেই দায়ী করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যাভ্যাস, স্থূলতা এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তাও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

এছাড়া অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা—যেমন অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি—অনেক সময় তরুণ রোগীদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। যেসব ক্যান্সার “ক্লিনিক্যালি মীনিংফুল” নয়, অর্থাৎ রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য বড় কোনো হুমকি নয়, সেগুলোর চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রে উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও আর্থিক বোঝা বাড়ায়।

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও বড় একটি বিষয়। ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তাই চিকিৎসকদের উচিত রোগীর ঝুঁকি মূল্যায়ন করে নির্ধারণ করা যে টিউমার সত্যিই ক্ষতিকর কি না। যদি টিউমার ক্ষুদ্র হয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ না হয়, তবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগীকে সচেতন রাখা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক সচেতনতা, নিয়মিত চেকআপ ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা তরুণদের ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা এড়িয়ে, রোগী ও চিকিৎসককে যৌথভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments