ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) শেষ প্রচারণা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ভোটগ্রহণের মাত্র একদিন বাকি। নির্বাচনী মাঠে বিভিন্ন সমীকরণ উঠে আসছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং কেন্দ্রগুলোর প্রভাব।
এইবারের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান ইউসিসিতে ক্লাস নিয়েছেন। তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং কোচিংয়ের পরিচিতি তাকে ভোটব্যাংকের সুবিধা দিতে পারে। অন্যদিকে, ফোকাস কোচিং কেন্দ্র পরিচালিত হয় ছাত্রশিবিরের হাতে। এই কেন্দ্র থেকেও ঢাবিতে ভর্তি হয় শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ। ফলে ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েমের জন্যও ভোটপুলিশ শক্তিশালী হতে পারে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ইংরেজি বিষয়ক কোচিংয়ের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে যথেষ্ট জনপ্রিয়। তার ক্লাসে পড়া শিক্ষার্থীদেরও ভোট প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে দেখা যায়, কোচিং কেন্দ্র তিন প্রার্থীরই ভোটব্যাংকের অংশ হয়ে উঠেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইউসিসি থেকে গত শিক্ষাবর্ষে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থী ঢাবিতে ভর্তি হয়েছেন, যাদের অনেকেই আবিদুলের ক্লাস করেছেন। ফোকাস কোচিং থেকেও হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন। গত তিন বছরে এই দুই কোচিং থেকে অন্তত আট হাজার শিক্ষার্থী ঢাবিতে ভর্তি হয়েছেন এবং তারা সবাই নির্বাচনে ভোটার।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ইউসিসিতে কোচিং করে ঢাবিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা আবিদুলকে ভিপি পদে দেখতে আগ্রহী। প্রচারণার সময়ও আবিদুলকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে শোনা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে তার জন্য ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। ইউসিসির কোচিং কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবিদুলের জন্য শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
ফোকাস কোচিং থেকে ঢাবিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রশিবিরের আদর্শ বা সমর্থন থাকা কারণে সাদিক কায়েমের ভোট সম্ভাবনা প্রবল। গত ৩০ আগস্ট ফোকাস কোচিং নতুন শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভিপি প্রার্থী সাদিক, জিএস প্রার্থী এবং এজিএস প্রার্থীকে উপস্থিত করেছিল। যদিও সরাসরি ভোট চাওয়া হয়নি, তবু তাদের উপস্থিতি নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে।
এছাড়া ইংরেজি পড়ানো স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেনেরও নিজের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ভোট প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তার ফলোয়াররা মূলত তার কোচিং ক্লাস এবং অনলাইন ভিডিওর মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষায় সুবিধা পেয়ে থাকেন।
তবে ডাকসুর সাবেক জিএস মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, কোচিংয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা কোনো প্রার্থীকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট দেবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনচেতা এবং তাদের ভোট রাজনৈতিক দর্শন ও প্রার্থীর যোগ্যতা বিবেচনায় করে দেওয়া উচিত। কোচিং সুবিধা ভোটের ফলাফল নিশ্চিত করবে না।