মার্কিন অভিবাসন আদালতের প্রথাগত প্রক্রিয়া হঠাৎ করেই ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। কিউবা থেকে আসা এক আশ্রয়প্রার্থী (আইনগত কাগজপত্রে পরিচিত “ইসি” নামে) ভেবেছিলেন দীর্ঘ তিন বছরের লড়াই শেষে তিনি স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পেতে যাচ্ছেন। আদালতের শুনানিতে সরকারের আইনজীবী জানালেন, বহিষ্কারের দাবি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে তিনি ও তাঁর আইনজীবীরা স্বস্তি পান।
কিন্তু বাস্তবে ঘটল ভিন্ন কিছু। আদালত থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইস (ICE) কর্মকর্তারা। কারণ, আদালতের আগের দিনই হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ নির্দেশ দিয়েছিল ধীরগতির মামলাগুলো দ্রুত বাতিল করে এগুলোকে জরুরি বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করতে। অর্থাৎ, যা একদিন আগে জয় হিসেবে মনে হয়েছিল, তা পরিণত হলো ভয়াবহ বিপর্যয়ে।
এই ঘটনা শুধু ইসির নয়, বরং গোটা মার্কিন অভিবাসন আদালত ব্যবস্থা যেন বিশৃঙ্খলার মুখে পড়েছে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে যে মামলাগুলো নিয়মমাফিক চলছিল, সেগুলো হঠাৎই বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এতে হাজার হাজার অভিবাসী চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্য শুধু বহিষ্কারের সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং অভিবাসন আদালতের স্বাধীনতাকে দুর্বল করা। আদালতগুলো আর অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় থাকছে না। জামিনের সুযোগ কমানো, শিশু ও দরিদ্র অভিবাসীদের জন্য আইনি সহায়তা বন্ধ করা, এমনকি যারা সরকারের নীতি অনুসরণ করছেন না—সেসব বিচারকদের বরখাস্ত করা হচ্ছে।
প্রাক্তন অভিবাসন বিচারকদের একাংশের মতে, এভাবে আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করা মানে বিচারব্যবস্থাকেই অচল করে দেওয়া। তাঁদের অভিযোগ, সরকারের পদক্ষেপে মানবিক মূল্যবোধের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা নেই, বরং অভিবাসীদের জীবনকে এক ধরনের “ফাঁদ” হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন একাধিক মেমো জারি করে বিচারকদের হাতে বাঁধন চাপিয়েছে। জামিন দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত করা, আশ্রয় প্রার্থীদের প্রমাণের মানদণ্ড কঠোর করা, এমনকি বিচারকদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অনেক অভিজ্ঞ বিচারককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং তাঁদের জায়গায় স্বল্প প্রশিক্ষিত সামরিক আইনজীবী নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অভিবাসন আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, এই পরিস্থিতি পুরো আইন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করছে। অভিবাসীদের পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ছে হাজারো মানুষ। আদালতের ভেতর-বাইরে আইস কর্মকর্তাদের অবস্থান আরও ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
সার্বিকভাবে, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ শুধু আদালতের নিয়ম পাল্টাচ্ছে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার মৌলিক কাঠামোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।