যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শনিবার ঘোষণা করেছেন যে তিনি দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নেয়। তিনি নাইজেরিয়াকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে দেশটি খ্রিস্টানদের প্রতি সহিংসতা রোধে যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না — যদিও নাইজেরিয়ার পক্ষ থেকে এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করা হয়েছে।
একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টে তিনি খ্রিস্টানদের “বৃহৎ হত্যাযজ্ঞ” উল্লেখ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র “তৎক্ষণাৎ নাইজেরিয়ার সব সহায়তা বন্ধ করবে” এবং সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সতর্ক করেছেন। তিনি আরও লিখেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে “সশস্ত্র অভিযান চালাতে পারে, ইসলামী উগ্রপন্থীদের সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে যারা এই ভয়াবহ সহিংসতা ঘটাচ্ছে।”
নাইজেরিয়ায় উভয় ধর্মের মানুষ — খ্রিস্টান এবং মুসলিম — উগ্র ইসলামপন্থীদের হামলার শিকার হয়েছে। দেশে সহিংসতার মূল কারণগুলো ভিন্নধর্মী: কিছু হামলা ধর্মীয় উদ্দীপনায় সংঘটিত হয়, যা উভয় সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে, আর কিছু সংঘাত কৃষক ও গবাদিপশু পালনকারীদের মধ্যে সীমিত সম্পদের ভাগাভাগি ও জাতিগত ও সম্প্রদায় ভিত্তিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত হয়।
যদিও খ্রিস্টানরা হামলার লক্ষ্যবস্তু, স্থানীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী বেশিরভাগ শিকার মুসলিম, যারা মূলত নাইজেরিয়ার মুসলিম প্রদেশগুলোতে বসবাস করেন।
প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় লেখা হয়েছে, “আমি আমাদের যুদ্ধ বিভাগের প্রতি নির্দেশ দিচ্ছি সম্ভাব্য পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিতে। যদি আমরা আক্রমণ করি, তা দ্রুত, নিষ্ঠুর ও কঠোর হবে, ঠিক যেমন উগ্রপন্থীরা আমাদের প্রিয় খ্রিস্টানদের উপর হামলা চালাচ্ছে। নাইজেরিয়ার সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিবও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের স্ক্রিনশট শেয়ার করে লিখেছেন, “নাইজেরিয়ায় নিরীহ খ্রিস্টানদের হত্যা — এবং বিশ্বের যেকোনো স্থানে — অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। যুদ্ধ বিভাগ পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিস্টানদের সুরক্ষা না দিলে, আমরা তাদের উপর হামলা চালাব যারা এই ভয়াবহ অপরাধ করছে।”
এই ঘোষণার আগে প্রেসিডেন্ট নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “খ্রিস্টান ধর্ম নাইজেরিয়ায় অস্তিত্বের সংকটে রয়েছে” এবং দেশটিকে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় “বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন এমন দেশ” হিসেবে চিহ্নিত করেন।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট এই অভিযোগের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, “নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে সহিংসতা প্রবণ দেশ হিসেবে দেখানো আমাদের বাস্তবতা প্রতিফলিত করে না। আমাদের সরকার সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট।” তিনি আরও বলেন যে, নাইজেরিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছে যাতে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ এবং মন্তব্যকে ঘিরে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, “আমাদের দেশের জন্য যা প্রয়োজন, তা হলো নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যে উগ্রপন্থীদের মোকাবিলার জন্য সামরিক সহায়তা, নয় ‘বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন’ হিসেবে দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা।”
যদিও হোয়াইট হাউস এবং নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে তৎক্ষণাৎ মন্তব্য আসেনি, তবে বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ছে। পরিস্থিতি স্বচ্ছতার অভাব এবং দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ভবিষ্যতে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টান ও মুসলিম উভয়ই সহিংসতার শিকার হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্টের এই হুঁশিয়ারি এবং সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি দেশটির রাজনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।



