Wednesday, December 24, 2025
spot_img
Homeখেলার জগৎট্রাম্পের বিশ্বকাপে টিকিটের হাহাকার

ট্রাম্পের বিশ্বকাপে টিকিটের হাহাকার

২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির তৃতীয় ধাপ শুরুর প্রথম ২৪ ঘণ্টাতেই প্রায় ৫০ লাখ টিকিটের আবেদন পেয়েছে ফিফা। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। টিকিটের মূল্য নিয়ে বিভিন্ন সমর্থক সংগঠনের তীব্র অসন্তোষ থাকা সত্ত্বেও এত বিপুল আবেদন বিশ্বকাপ ঘিরে আগ্রহের মাত্রা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

ফিফার দাবি, এই আবেদনসংখ্যা প্রমাণ করে বিশ্বজুড়ে বিশ্বকাপের টিকিটের চাহিদা নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে যৌথভাবে আয়োজিত হতে যাওয়া টুর্নামেন্টের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এবারই প্রথমবার সমর্থকেরা নির্দিষ্ট ম্যাচ বেছে নিয়ে টিকিটের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন।

৪৮ দল নিয়ে প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া এই বিশ্বকাপকে ঘিরে ২০০-এর বেশি দেশের সমর্থকদের ব্যাপক আগ্রহের কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছে ফিফা। সংস্থাটির বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, বৃহস্পতিবার নতুন টিকিটমূল্য প্রকাশের পর যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তা সত্ত্বেও তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসছে না।

জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত এক তালিকা অনুযায়ী, গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোর টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ ডলার থেকে ৭০০ ডলারের মধ্যে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২১ হাজার ৯৫৫ টাকা থেকে ৮৫ হাজার ৩৮৪ টাকা। ফাইনাল ম্যাচের ক্ষেত্রে টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৮৫ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ লাখ ১০ হাজার। সর্বোচ্চ মূল্য ৮ হাজার ৬৮০ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৪ টাকা।

ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাদের সমর্থকদের জন্য প্রকাশিত মূল্যতালিকায় জানিয়েছে, কোনো সমর্থক যদি গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচের টিকিট কিনতে চান, তাহলে তাঁর মোট ব্যয় হবে ৭ হাজার ডলারের কিছু বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অঙ্ক প্রায় ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকার কাছাকাছি।

এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন সমর্থক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ বর্তমান টিকিটমূল্যকে অতিরিক্ত শোষণমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা মনে করে, এই মূল্য নির্ধারণ বিশ্বকাপের ঐতিহ্য, সর্বজনীনতা ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের পরিপন্থী। সংগঠনটি একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত জাতীয় ফুটবল সংস্থাগুলোর মাধ্যমে টিকিট বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বিশ্বকাপকে প্রাণবন্ত করে তোলা সাধারণ সমর্থকদের অবদান এখানে পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে।

সাত বছর আগে টুর্নামেন্ট আয়োজনের বিড দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল কর্মকর্তারা শুরুর দিকের ম্যাচগুলোর জন্য ২১ ডলারের কয়েক লাখ টিকিট রাখার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তবে এবারের বিশ্বকাপে ফিফা প্রথমবারের মতো ডায়নামিক প্রাইসিং পদ্ধতি চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে টিকিটের দাম পরিবর্তিত হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ক্লাব বিশ্বকাপেও একই কৌশল অনুসরণ করা হয়েছিল।

অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে মূল্যবৃদ্ধির চিত্র আরও স্পষ্ট হয়। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে টিকিটের দাম ছিল ২৫ থেকে ৪৭৫ ডলারের মধ্যে। আর ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০ থেকে ১ হাজার ৬০০ ডলারের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া র‌্যান্ডম সিলেকশন ড্রয়ের মাধ্যমে সমর্থকেরা পছন্দের ম্যাচ, টিকিটের ক্যাটাগরি এবং প্রতি ম্যাচে কতটি টিকিট কিনবেন তা বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে আবেদন করলেই টিকিট পাওয়া নিশ্চিত নয়। তৃতীয় ধাপের এই প্রক্রিয়া চলবে ২০২৬ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। যাঁদের আবেদন সফল হবে, তাঁদের ফেব্রুয়ারিতে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হবে এবং নির্ধারিত অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে।

ফিফার তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপে টিকিটের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে আয়োজক তিন দেশ। পাশাপাশি আমেরিকা মহাদেশের অন্যান্য দেশ থেকেও ব্যাপক আবেদন এসেছে। সবচেয়ে বেশি টিকিটের আবেদন করা পরবর্তী ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্কটল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও পানামা।

গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোর মধ্যে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি টিকিটের আবেদন পড়েছে ২৭ জুন মায়ামিতে অনুষ্ঠিতব্য কলম্বিয়া ও পর্তুগালের ম্যাচে। পর্তুগালের অধিনায়ককে ঘিরে সমর্থকদের বাড়তি আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট। এ ছাড়া ব্রাজিল ও মরক্কো, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া, ইকুয়েডর ও জার্মানি, স্কটল্যান্ড ও ব্রাজিলের ম্যাচগুলোর টিকিটের চাহিদাও উল্লেখযোগ্য।

শুক্রবার ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন টিকিটের দাম নিয়ে দেশের সমর্থকদের অসন্তোষের বিষয়টি ফিফার কাছে তুলে ধরতে যাচ্ছে। তবে এতে বাস্তব কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে ফিফা আবারও উল্লেখ করেছে, একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে অর্জিত পুরো আয় তারা বিশ্বের ২১১টি দেশের পুরুষ, নারী ও যুব ফুটবলের উন্নয়নে বিনিয়োগ করে থাকে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments