১ আগস্ট ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্যনীতি কার্যকর হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন করে সাজাচ্ছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পরই ঘোষণা করেছিলেন যে, বিভিন্ন দেশ এতদিন ধরে অন্যায্য বাণিজ্যিক সুবিধা এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এসেছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনি এপ্রিলের প্রথম দিকেই বিভিন্ন দেশের রপ্তানির ওপর একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। তার আরোপিত শুল্ক প্রচলিত হারের চেয়ে অনেক বেশি ছিল এবং এর কোনো বস্তুনিষ্ঠ ভিত্তি ছিল না। বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে চীন, এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় এবং পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে কিছুটা পিছু হটেন এবং ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেন। এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি দেশকে দ্বিপাক্ষিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন বাণিজ্যচুক্তি করার জন্য সময় দেওয়া হয়। ৩১ জুলাই ছিল সেই সময়সীমার শেষ দিন।
গত তিন মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা ওয়াশিংটনে এসে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন এবং নতুন চুক্তিতে উপনীত হন। এই আলোচনার ফলস্বরূপ যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ, ভিয়েতনাম ২৯ শতাংশ, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ১৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়া ১৯ শতাংশ শুল্কের অধীনে এসেছে। ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
তবে এই পুরো প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ট্রাম্পের কৌশল। তিনি কোনো বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্ম বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক কাঠামো ব্যবহার করেননি। এর পেছনে তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে:
১. জবাবদিহিতা থেকে মুক্তি: ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের কোনো বহুজাতিক কাঠামোর কাছে জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত রেখেছে।
২. সর্বাধিক সুবিধা আদায়: প্রতিটি দেশের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে আলোচনার মাধ্যমে তিনি তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের জন্য সর্বাধিক সুবিধা আদায় করতে চেয়েছেন।
৩. ‘বিভাজন ও শাসন’ নীতি: বহুপাক্ষিক কাঠামো ব্যবহার না করে তিনি দেশগুলোকে একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেননি, বরং ‘বিভাজন ও শাসন’ নীতি অনুসরণ করে বাণিজ্য প্রতিপক্ষদের দুর্বল করে দিয়েছেন।
এই নতুন শুল্কনীতিতে ট্রাম্প স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য চিরাচরিত বিশেষ সুবিধাকেও বাতিল করেছেন। চীনের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং দুই সপ্তাহের জন্য আলোচনা স্থগিত রাখা হয়েছে। এই বিরতির পর ট্রাম্প প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। সামগ্রিকভাবে, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং কৌশলগত চাপ প্রাধান্য পাচ্ছে।