নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ও সাবেক অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই সংস্করণে দেশের অন্যতম ভরসা ছিলেন তিনি। উইলিয়ামসনের এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন সময়ে, যখন ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি রয়েছে মাত্র চার মাসেরও কম সময়।
৩৫ বছর বয়সী এই কিউই ব্যাটার নিউজিল্যান্ডের হয়ে মোট ৯৩টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ৩৩ গড়ে করেছেন ২৫৭৫ রান, যা তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হিসেবে স্থান দিয়েছে। মাঠে তাঁর শান্ত ও কৌশলনির্ভর উপস্থিতি তাঁকে দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ে পরিণত করেছিল।
২০১১ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় উইলিয়ামসনের। এরপর প্রায় দেড় দশকের ক্যারিয়ারে তিনি কিউইদের নেতৃত্ব দিয়েছেন বহু ম্যাচে। অধিনায়ক হিসেবে ৯৩ ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তাঁর অধিনায়কত্বে নিউজিল্যান্ড দল ২০১৬ ও ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল এবং ২০২১ সালের আসরে খেলেছিল ফাইনালে। নেতৃত্বে তাঁর স্থিতিশীলতা ও ব্যাট হাতে নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স তাঁকে সমসাময়িক সেরা নেতাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে উইলিয়ামসন বলেছেন, “দীর্ঘ সময় ধরে এই ফরম্যাটের অংশ হতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আমাকে অসংখ্য স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা দিয়েছে। এখন সময় এসেছে নতুন প্রজন্মকে সুযোগ দেওয়ার। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তটাই সঠিক সময়—নিজের জন্য, দলের জন্য, এবং ভবিষ্যতের জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দলে প্রচুর প্রতিভাবান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার আছে। আগামী সময়টা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মিচ স্যান্টনার একজন অসাধারণ নেতা, সে ইতিমধ্যেই দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছে। আমি এখন তাদের সাফল্য দূর থেকে উপভোগ করব এবং সবসময় সমর্থন দিয়ে যাব।”
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে উইলিয়ামসন সাদা বলের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মাঠে নামেননি তিনি। পারিবারিক দায়িত্ব, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ব্যস্ততা এবং ইনজুরির কারণে জাতীয় দলে নিয়মিত ছিলেন না এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাম্প্রতিক টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ইনজুরির কারণে তিনি দলে ছিলেন না।
এর আগে ওয়ানডে সিরিজে চোট থেকে ফিরে এলেও শেষ ম্যাচে পুনরায় ইনজুরিতে পড়েন উইলিয়ামসন। তবু তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখানেই থেমে থাকছে না। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় জানালেও ওয়ানডে, টেস্ট এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উইলিয়ামসনের অবদান দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। তাঁর মতো একজন শান্ত, বুদ্ধিদীপ্ত ও নেতৃত্বগুণে অনন্য খেলোয়াড়কে হারানো সহজ নয়। তবে দল এখন নতুন প্রজন্মের হাতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক একটি দিক।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উইলিয়ামসনের পথচলা শেষ হলেও তাঁর প্রভাব রয়ে যাবে দীর্ঘদিন। তাঁর নেতৃত্ব, কৌশল এবং স্থিতধী মানসিকতা অনেক তরুণ ক্রিকেটারের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, যারা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ব্ল্যাকক্যাপসকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।



