Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনজার্মানিতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ: জানুন নিয়ম ও সুবিধাগুলো

জার্মানিতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ: জানুন নিয়ম ও সুবিধাগুলো

উচ্চমানের শিক্ষা, কম খরচ এবং পড়াশোনার পর কর্মসংস্থানের সুযোগ—এই তিনটি কারণেই জার্মানি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু মানসম্মতই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগও প্রদান করে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ পান, যা তাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে।

তবে এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে কিছু নিয়ম ও শর্ত সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। জার্মানির আইন অনুসারে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কাজ করতে পারেন।

কাজের সময়সীমা
জার্মানিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার চলাকালে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। আর সেমিস্টার বিরতির সময় পূর্ণকালীন কাজের অনুমতি রয়েছে। পুরো বছরের হিসাবে এই সময়সীমা দাঁড়ায় ১৪০ পূর্ণদিন বা ২৮০ অর্ধদিন। নির্ধারিত সীমার বেশি কাজ করলে ভিসা স্ট্যাটাস বাতিলের ঝুঁকি থাকে।

তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, যদি কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপে যুক্ত থাকেন, তবে সেই সময়সীমা এই হিসাবের মধ্যে পড়বে না। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক বা রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করলে বিশেষ ক্ষেত্রে এই সীমার বাইরে কাজের অনুমতিও পাওয়া যেতে পারে।

আইনি প্রয়োজনীয়তা
জার্মানিতে বৈধভাবে কাজ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকতে হয়। যেমন—

  • জার্মান ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর

  • একটি জার্মান ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

  • সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর

এই নথিগুলো ছাড়া দেশে বৈধভাবে চাকরি করা যায় না।

মাসিক আয়ের নিয়ম
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জার্মানিতে ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হয়েছে ১২ দশমিক ৮২ ইউরো। শিক্ষার্থীর মাসিক আয় যদি ৫২০ ইউরোর বেশি হয়, তবে তাকে সামাজিক নিরাপত্তা অবদান দিতে হয় এবং বছরের শেষে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হয়। অর্থাৎ, আয়ের পরিমাণ বাড়লে নিয়ম অনুযায়ী কর পরিশোধ করতে হয়।

জনপ্রিয় পার্ট-টাইম চাকরির ধরন
জার্মানিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ পান।

অন-ক্যাম্পাস কাজের মধ্যে রয়েছে:

  • লাইব্রেরি সহকারী

  • ছাত্রসংস্থা বা প্রশাসনিক বিভাগে কর্মী

  • রিসার্চ বা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট

অফ-ক্যাম্পাস কাজের মধ্যে সাধারণত দেখা যায়:

  • রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে বা সুপারমার্কেটে কাজ

  • খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে সহকারী হিসেবে কাজ

  • গ্রাহকসেবা বা ডেলিভারি সার্ভিসে যুক্ত থাকা

এ ছাড়া দক্ষতাভিত্তিক কিছু কাজও শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, যেমন— ভাষা শিক্ষা, অনুবাদ, আইটি সাপোর্ট, কনটেন্ট ক্রিয়েশন বা টেক সহায়তা।

চাকরি খোঁজার উপায়
জার্মানিতে পার্ট-টাইম কাজ খোঁজার জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক—দুটি ক্ষেত্রই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ক্যারিয়ার সেন্টার থাকে, যেখানে চাকরির বিজ্ঞপ্তি, রিজ্যুমে সহায়তা এবং ক্যারিয়ার পরামর্শ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া অনলাইন জব পোর্টাল যেমন Stepstone, Indeed, Xing, এবং LinkedIn-এ নিয়মিত খণ্ডকালীন চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

উপসংহার
জার্মানি এমন একটি শিক্ষাবান্ধব দেশ, যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের দক্ষতা ও কর্মঅভিজ্ঞতা বাড়াতে পারেন। সুনির্দিষ্ট আইন, শ্রমিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহায়ক অবকাঠামো শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম কাজকে নিরাপদ ও সহজ করে তুলেছে। এই সুযোগগুলো শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র আর্থিকভাবে নয়, ভবিষ্যতের পেশাগত জীবনের জন্যও প্রস্তুত করে তোলে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments