Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যজানেন কি? ডিমেনশিয়া মাথা নয়, পা থেকেই শুরু হতে পারে!

জানেন কি? ডিমেনশিয়া মাথা নয়, পা থেকেই শুরু হতে পারে!

ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ আজ বিশ্বব্যাপী প্রবীণদের মধ্যে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যসমস্যা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা শুধু স্মৃতিশক্তিই নয়—মানসিক ভারসাম্য, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন জীবনযাপনকেও প্রভাবিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ বর্তমানে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত, এবং প্রতিবছর এই সংখ্যা আরও প্রায় ১০ লাখ করে বাড়ছে।

তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। বহু মানুষ মনে করেন—মস্তিষ্কের কাজ বাড়ালেই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, আসলে এই রোগের সূচনা মাথা নয়, পা থেকেই হতে পারে। অর্থাৎ মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে হলে প্রথমেই দরকার আপনার পা দু’টি সচল ও শক্ত রাখা।


ডিমেনশিয়া কী?

ডিমেনশিয়া এমন এক অবস্থা, যা আসলে অনেক ধরনের স্নায়বিক রোগের সম্মিলিত রূপ। এই রোগে মস্তিষ্কের কোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে চিন্তা, বোঝা, মনে রাখা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনযাপনে—স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে, এবং অনেক সময় মানুষ নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কেও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা, পরিবারের সহায়তা, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।


পা দুর্বল হলে কেন ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে?

বয়স বা শারীরিক অলসতার কারণে অনেকের পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে পেশির ভর (muscle mass) কমে যায়, যা কখনও কখনও পেশির ক্ষয়রোগেও রূপ নেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পা মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি দ্রুত কমিয়ে দেয়। কারণ, পা–এর কর্মক্ষমতা কমলে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা ও স্নায়ু–সংযোগও দুর্বল হয়ে যায়।

অন্যদিকে, শক্তিশালী পেশি শরীরে এমন একধরনের রাসায়নিক নির্গত করে, যাকে Brain–Derived Neurotrophic Factor (BDNF) বলা হয়। এই রাসায়নিক মস্তিষ্কের কোষকে পুষ্টি জোগায়, নতুন স্মৃতি গঠনে সহায়তা করে এবং পুরোনো তথ্য সংরক্ষণে সাহায্য করে।

শক্তিশালী পা মানে শুধু ভারসাম্য নয়, বরং তা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


হাঁটা কীভাবে মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে?

গবেষণা বলছে, নিয়মিত হাঁটা শুধু শরীরের জন্য নয়, বরং পুরো মস্তিষ্কেরও এক ধরণের ব্যায়াম। হাঁটার সময় মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরেবেলাম, স্পাইনাল কর্ড এবং ইন্দ্রিয় ব্যবস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করে। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, যা অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়—এই দুই উপাদানই মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

এছাড়া, হাঁটার মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায়, যা স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। হাঁটার ধরন, গতি বা ভারসাম্য অনেক সময় মস্তিষ্কের রোগের প্রাথমিক ইঙ্গিতও দিতে পারে।


ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে করণীয়

গবেষকরা বলছেন, প্রতিদিন সামান্য শারীরিক নড়াচড়াই মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখতে পারে। কিছু সহজ উপায় হলো—

  1. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন।

  2. এক পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো বা সরলরেখা ধরে হাঁটার মতো ভারসাম্য ব্যায়াম করুন।

  3. হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা বা চিন্তা করার অভ্যাস করুন।

  4. কোমর থেকে নিচের অংশের পেশি–শক্তি বাড়ানো ব্যায়াম করুন।

  5. দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে থাকবেন না—প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার নড়াচড়া করুন।

  6. আমিষ ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান, যা পেশি গঠনে সাহায্য করে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, “যদি আপনার পা ধীরে চলে, তাহলে আপনার মস্তিষ্কও ধীরে চলবে।” তাই মস্তিষ্ককে সতেজ রাখতে পায়ের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৪০ বছর বয়সের পর থেকেই পায়ের শক্তি ধরে রাখার চর্চা শুরু করা উচিত।


শেষ কথা

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে পা–এর যত্ন নেওয়া এক অনন্য উপায়। নিয়মিত হাঁটা, শরীরচর্চা ও সক্রিয় জীবনযাপন শুধু শরীর নয়, মনকেও তরতাজা রাখে। মনে রাখবেন—
“শক্ত পা মানেই সতেজ মাথা।”
আজ থেকেই শুরু করুন আপনার প্রতিটি পদক্ষেপের যত্ন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments