মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন এমন এক সময়ে, যখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো ঘনিষ্ঠ মিত্ররা সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্প তার ভাষণে “বিশ্বজুড়ে আমেরিকার শক্তির পুনর্নবীকরণ” এবং তার দ্বিতীয় মেয়াদে দাপ্তরিক সাফল্য তুলে ধরবেন। বিশেষ করে বিদেশে সংঘাত হ্রাসের প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক অর্জনগুলোকে তিনি সামনে আনবেন। বক্তৃতার পর ট্রাম্প জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন এবং ইউক্রেন, আর্জেন্টিনা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও কাতার, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জর্ডানের নেতাদের সঙ্গে বহুপাক্ষিক বৈঠকেও অংশ নেবেন।
ট্রাম্পের এই ভাষণ তার প্রথম মেয়াদের স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে, যখন তিনি জাতিসংঘে গ্লোবালিজমকে প্রত্যাখ্যান করে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদে একীভূত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই সময় অনেক রাষ্ট্রনেতা তার মন্তব্যকে উপহাস করেছিলেন। তবে এবার বৈদেশিক সম্পর্ক কিছুটা উন্নত হলেও, আমেরিকার শক্তির বিস্তৃত চিত্র তিনি তুলে ধরছেন শুল্কনীতি কঠোর করে, যা মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী— উভয়ের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমিয়ে আনার প্রবণতাও স্পষ্ট হয়েছে। দেশটি সংস্থাটিতে আর্থিক অনুদান কমিয়ে দিয়েছে এবং সম্প্রতি পর্যন্ত জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পদ শূন্য ছিল। নতুন নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সোমবার রাশিয়ার সাম্প্রতিক আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় ন্যাটো মিত্র এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ডের নিরাপত্তা নিয়ে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
এদিকে, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও দেশ এই পথে হাঁটবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে “হামাসকে পুরস্কৃত করার” সমান মনে করছেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল কথার ফুলঝুরি, বাস্তব পদক্ষেপ নয়।
বাণিজ্যনীতিতেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকট। ট্রাম্প ইউরোপীয় দেশগুলোকে ভারত ও চীনের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে চাপ দেওয়া যায়। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ভারত থেকে তেল আমদানির জন্য কঠোর শুল্ক আরোপ করেছে এবং নতুন এইচ-১বি ভিসার জন্য ১ লাখ ডলার ফি ঘোষণা করেছে।
গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে, যদিও ট্রাম্প বারবার এই সংঘাতগুলোর সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি স্বীকার করেছেন, পুতিন তার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন, বিশেষ করে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর। এদিকে, পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র চুক্তি আরেক বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, যা নিয়ে আলোচনা চলছে।
জাতিসংঘে আসন্ন ভাষণকে ঘিরে স্পষ্ট হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একদিকে বৈশ্বিক নেতৃত্বে আমেরিকার শক্তি তুলে ধরতে চাইছেন, অন্যদিকে মিত্রদের সঙ্গে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে।