যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার নিয়ে বড় ধরনের আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। প্রশাসন চায়, সর্বোচ্চ আদালত সুস্পষ্টভাবে জানাক—সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর অধীনে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ বৈধ কি না।
শুক্রবার এ সংক্রান্ত দুটি মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে। একটি এসেছে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য থেকে, অন্যটি নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে। এই দুটি মামলার রায়ই নির্ধারণ করবে প্রশাসনের বিতর্কিত প্রস্তাব কার্যকর হবে কি না।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত ছিল, যে কেউ দেশটির মাটিতে জন্ম নিলে নাগরিকত্ব লাভ করবে। কেবল কূটনীতিকদের সন্তানরা এই নিয়মের বাইরে থাকবে। ১৪তম সংশোধনীতে এ বিষয়টি উল্লেখ আছে। কিন্তু প্রশাসন বলছে, এই সুবিধা সাময়িক ভিসাধারী কিংবা অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
প্রশাসনের আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি তুলে ধরে বলছেন, শতাধিক বছর ধরে যে ধারণা প্রচলিত, তা আসলে ভুল ব্যাখ্যা। তাদের দাবি, এই ভুল ধারণাই দেশে নানা সমস্যার জন্ম দিয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষেই কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। তবে সেগুলো ছিল টেকনিক্যাল বিষয়ক—মামলা চলাকালে ফেডারেল বিচারকরা নীতিমালা সারাদেশে আটকে রাখতে পারবেন কি না, সেটি নিয়ে। কিন্তু সর্বশেষ যে আপিল করা হয়েছে, তা সরাসরি নীতিমালার বৈধতা নিয়ে।
এইবার বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে শোনার অনুরোধ করা হয়নি। নিয়মিত আপিল হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে, ফলে সুপ্রিম কোর্ট চাইলে কয়েক মাস পর এ নিয়ে শুনানি করতে পারে। আদালতের নতুন অধিবেশন শুরু হবে আগামী অক্টোবর থেকে, যা চলবে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। তাই রায় পেতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
এখনও পর্যন্ত মামলাগুলো আদালতের অফিসিয়াল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানায়, তারা মামলার নথিপত্র জমা দিয়েছে।
অন্যদিকে, অভিবাসী অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বলছে, এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনি। তাদের মতে, প্রশাসন যত কৌশলই অবলম্বন করুক না কেন, সংবিধানের স্পষ্ট ধারা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এক ঐতিহাসিক আইনি লড়াই শুরু হলো। এখন দেখার বিষয়, সর্বোচ্চ আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়—এটি কি দেশের প্রচলিত নাগরিকত্ব নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে, নাকি পুরোনো ধারা বহাল থাকবে।