চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আজ সরাসরি সম্প্রচারের এক বিশেষ আয়োজন দেখা গেছে। স্বাধীনতা চত্বরের ১ নম্বর ক্যানটিনের সামনে একটি বড় পর্দায় সম্প্রচার করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের মধ্যে গভীর আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।
উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যারা প্রজেক্টরের সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি রায় দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বড় টেবিলের উপর রাখা ল্যাপটপ, প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে রায় দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস এবং উৎসুকতা চোখে পড়ার মতো ছিল।
চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইফতেখার মাহমুদ জানান, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের পাশাপাশি দেশের মানুষ রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। চুয়েটের শিক্ষার্থীরাও সেই একইভাবে রায়ের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে।” এই সরাসরি সম্প্রচারের আয়োজন মূলত শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বাস্তবায়িত হয়েছে।
উল্লেখ্য, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মামলার রায় ঘোষণা করছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায়ের অংশ হিসেবে সাবেক আইজিপি মামুন জবানবন্দি দিয়েছেন ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে।
শিক্ষার্থীদের এই আগ্রহের পেছনে রয়েছে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি। সরাসরি রায় দেখার মাধ্যমে তারা ঘটনাটির সঙ্গে আরও সংযুক্ত বোধ করছেন। প্রজেক্টরের মাধ্যমে রায় দেখানো আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়টির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করেছে এবং দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সচেতনতা তৈরি করছে।
এই সরাসরি সম্প্রচারটি শুধুমাত্র চুয়েটেই সীমাবদ্ধ ছিল না; শিক্ষার্থীরা সামাজিক সংযুক্তি ও জনসাধারণের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশীদার হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। স্বাধীনতা চত্বরের এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তথ্যভিত্তিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণকে উসকে দিয়েছে।
মামলার রায়, দেশজুড়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও সরাসরি সম্প্রচার দেখার আগ্রহ এটিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ সমাজের মধ্যে এই ধরনের সরাসরি নজরদারি শিক্ষার্থী ও দেশের মানুষকে বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।



