বিরল খনিজ ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে বিশ্বের বাজারে আবারও বড় ধাক্কা লেগেছে চীনের নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে। বৃহস্পতিবার চীনের এই পদক্ষেপের পর যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্যে তীব্র উত্থান দেখা যায়। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে আরও দ্রুত নিজস্ব সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে ঠেলে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খনিজ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউএসএ রেয়ার আর্থ–এর শেয়ার মূল্য বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ, এমপি ম্যাটেরিয়ালস লাফিয়ে উঠেছে ৪ শতাংশের বেশি, আর এনার্জি ফুয়েলস প্রায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বাজার খোলার আগেই। এছাড়া লিথিয়াম আমেরিকাস–এর শেয়ার মূল্য বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ, আর ট্রিলজি মেটালস এর লাফ ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, এখন থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন পণ্য রপ্তানি করতে হলে বিশেষ লাইসেন্স নিতে হবে, যেগুলিতে চীনে আহরিত ০.১ শতাংশের বেশি বিরল খনিজ রয়েছে। পাশাপাশি, যারা চীনের খনিজ আহরণ, পরিশোধন বা চুম্বক পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাদেরও এই লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের সময়কালও কৌশলগত। কারণ, আগামী ৩১ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে এই ঘোষণা বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিকভাবে বড় ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করছেন অনেকে।
একজন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা জানান, “হঠাৎ কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি সরবরাহ চেইনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, হোয়াইট হাউস ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে এর প্রভাব বিশ্লেষণ শুরু করেছে।
মার্কিন প্রশাসন ও দেশটির খনিজ শিল্পের অংশীদাররা অভিযোগ করে আসছে যে, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং প্রতিযোগী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার বাইরে ঠেলে দিতে চাইছে। বিরল খনিজ উপকরণ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদন, রোবোটিকস, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। চলতি বছর মার্কিন সরকার এমপি ম্যাটেরিয়ালস, লিথিয়াম আমেরিকাস এবং ট্রিলজি মেটালস–এর অংশীদারিত্ব নিয়েছে। এর লক্ষ্য—দেশীয়ভাবে একটি টেকসই সরবরাহ চেইন গড়ে তোলা।
অন্যদিকে, ইউএসএ রেয়ার আর্থ ও এনার্জি ফুয়েলস এখনও সরকারিভাবে কোনো চুক্তিতে পৌঁছায়নি। তবে দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন এবং দেশীয় উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই পদক্ষেপ কেবল বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর প্রচেষ্টা নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি শিল্পে এক নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এখন দেশীয় বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার মাধ্যমে সেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।



