Monday, December 22, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকচিলির নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থীর চমক

চিলির নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থীর চমক

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির ৩৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটে কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। মধ্য বামপন্থী জোটের প্রার্থীকে পরাজিত করে ডানপন্থী রিপাবলিকান ধারার এই নেতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

রোববার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার ভোট শেষে প্রায় সব ভোট গণনা সম্পন্ন হলে দেখা যায়, বিজয়ী প্রার্থী মোট ভোটের প্রায় ৫৮ শতাংশ পেয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক শ্রমমন্ত্রী, যিনি কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিক এবং ক্ষমতাসীন মধ্য বাম জোটের মনোনীত প্রার্থী। ভোটের ফল ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই পরাজিত প্রার্থী ও তাঁর জোট পরাজয় মেনে নেয়।

পরাজয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় সাবেক শ্রমমন্ত্রী বলেন, যাঁরা তাঁদের সমর্থন করেছেন এবং এই প্রার্থিতার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে তিনি আশ্বস্ত করতে চান যে দেশের মানুষের জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে তাঁদের রাজনৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও জানান, তাঁরা আগের মতোই ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়ভাবে জনগণের পাশে থাকবেন।

এই নির্বাচনী ফল লাতিন আমেরিকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ধারার সঙ্গেও মিল রেখে এসেছে। গত কয়েক বছরে আর্জেন্টিনা ও ইকুয়েডরের মতো দেশে ডানপন্থী রাজনীতিকেরা ক্ষমতায় এসেছেন, যাঁদের অনেকেই একসময় রাজনৈতিক বহিরাগত হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। চিলির এই নির্বাচন সেই ধারাবাহিকতাকেই আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরল।

এই জয় কট্টর ডানপন্থী নেতার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক জীবনে বড় ধরনের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে। ৫৯ বছর বয়সী এই রাজনীতিক রিপাবলিকান পার্টির নেতা এবং তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর আগে দুটি নির্বাচনে তিনি পরাজিত হলেও এবার প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছালেন।

২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্টের কাছে হেরে যান। সেই প্রেসিডেন্ট ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা, যিনি চিলির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছিলেন। তবে তাঁর চার বছরের মেয়াদের শেষ দিকে জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে এবং দেশটির আইন অনুযায়ী তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাননি।

নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে দেখা যায়, চিলির অর্থনৈতিক মন্দা, অপরাধ বৃদ্ধি এবং অভিবাসনের হার বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভোটারদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ রয়েছে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার চালান। তিনি অপরাধ দমন এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দেন। এমনকি ব্যাপক হারে অভিবাসীদের বিতাড়নের প্রতিশ্রুতিও দেন, যা আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচিত কিছু ডানপন্থী নীতির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

সামাজিক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়েও তিনি কট্টর ডানপন্থী অবস্থান নিয়েছেন। গর্ভপাতের বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ বিরোধী এবং ধর্ষণের ক্ষেত্রেও গর্ভপাতের অনুমতির বিপক্ষে অবস্থান প্রকাশ করেছেন। এসব কারণে নির্বাচনী প্রচারের সময় তাঁকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

সমালোচকেরা বিশেষ করে চিলির সাবেক সামরিক শাসক সম্পর্কে তাঁর সহানুভূতিশীল মন্তব্যের দিকে আঙুল তুলেছেন। ১৯৭৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার উৎখাত হয় এবং সামরিক শাসন শুরু হয়, যা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলেছিল। সেই সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং হাজারো মানুষের হত্যার অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

যদিও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিজেকে কট্টর ডানপন্থী বলতে নারাজ, তবে তিনি বারবার সামরিক শাসনামলের সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এমনকি তিনি মন্তব্য করেছেন, ওই শাসক জীবিত থাকলে তাঁকেই ভোট দিতেন।

এ ছাড়া তাঁর পারিবারিক ইতিহাস নিয়েও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে। তাঁর বাবা জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং একসময় নাৎসি পার্টির সদস্য ছিলেন। পরে তিনি ১৯৫০ সালে চিলিতে অভিবাসী হন।

চিলিতে ২০১২ সালের পর এই প্রথম ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ। গত ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে তিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। তবে গণমাধ্যম ও জনমত জরিপে তখনই আভাস মিলেছিল যে দ্বিতীয় দফায় ব্যবধান ঘুচিয়ে ডানপন্থী প্রার্থী জয় পেতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সেই পূর্বাভাসই বাস্তবে রূপ নিল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments