চিকাগোর ফেডারেল আদালত সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার প্যাট্রোল বিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে প্রতিদিন আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিবাসন কার্যক্রমে অনিয়ম এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার ফেডারেল আদালতে হাজির হন বর্ডার প্যাট্রোলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটির কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আদালত তাঁকে নির্দেশ দিয়েছে— প্রতিদিন বিকেল ছয়টায় ফেডারেল কোর্টে হাজির হয়ে দিনের অভিবাসন কার্যক্রমের প্রতিবেদন দিতে হবে। একই সঙ্গে আগামী শুক্রবারের মধ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সব এজেন্টের “ইউজ অব ফোর্স” (বলপ্রয়োগ সংক্রান্ত) রিপোর্ট এবং সংশ্লিষ্ট বডিক্যাম ফুটেজ জমা দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এই নির্দেশনা মূলত স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এসেছে। সম্প্রতি একাধিক ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, অভিবাসন এজেন্টরা বসতবাড়ি এলাকায় কেমিক্যাল এজেন্ট বা টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করছেন। আদালতের পূর্ববর্তী আদেশ অনুযায়ী, এমন পরিস্থিতিতে কেমিক্যাল ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল যদি না কর্মকর্তাদের জীবন বা নিরাপত্তা সরাসরি হুমকির মুখে পড়ে।
আদালত পূর্বে আরও নির্দেশ দিয়েছিল যে, সকল অভিবাসন কর্মকর্তা কর্তব্যরত অবস্থায় বডিক্যাম পরিধান ও সক্রিয় রাখবেন। মঙ্গলবারের শুনানিতে বিচারক জানতে চান, অভিযুক্ত কর্মকর্তা নিজে কি ওই দিন বডিক্যাম ব্যবহার করেছিলেন? উত্তরে তিনি জানান, “না, আমি ব্যবহার করিনি।” তিনি আরও স্বীকার করেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো প্রশিক্ষণও ছিল না।
তবে তিনি বলেন, তাঁর অধীনে থাকা অধিকাংশ এজেন্ট— প্রায় ৯৯ শতাংশ— বডিক্যাম পরিধান করেন। আদালতের নির্দেশে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, শুক্রবারের মধ্যে নিজেও বডিক্যাম গ্রহণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করবেন।
বিচারক উল্লেখ করেন, কেমিক্যাল এজেন্ট ব্যবহারে দেখা গেছে অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগের উদাহরণ, যা পূর্বের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, “আমি যেসব ফুটেজ ও রিপোর্ট দেখেছি, তা থেকে বোঝা যায় এই বলপ্রয়োগ প্রয়োজনীয় ছিল না।”
এসময় আদালত পূর্বের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ভাষা পুনরায় পড়ে শোনান এবং বলেন, “মনে হচ্ছে, আপনি আমার দেওয়া নির্দেশনা সম্পূর্ণরূপে বোঝেননি।” অভিযুক্ত কর্মকর্তা মাথা নেড়ে সম্মতি জানান এবং বলেন, “জি, ম্যাডাম।”
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় এজেন্টরা হুমকির মুখে পড়েছিলেন, তাই টিয়ার গ্যাস ব্যবহারে বাধ্য হন। তবে সাক্ষীরা জানিয়েছেন, কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে।
বিচারক সাম্প্রতিক এক ঘটনায় মন্তব্য করেন, “হ্যালোইন উৎসবের দিন ছোট বাচ্চারা যখন স্কুলের মাঠে কস্টিউম পরে প্যারেডে যাচ্ছিল, তখন তাঁদের ওপর টিয়ার গ্যাস প্রয়োগের কোনো যৌক্তিকতা নেই।” তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “শিশুরা আইনশৃঙ্খলার হুমকি নয়, বরং তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব।”
তিনি আরও নির্দেশ দেন, কোনো পরিস্থিতিতেই সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি, এজেন্টদের পোশাকে পরিষ্কারভাবে শনাক্তকরণ নম্বর প্রদর্শনের কথাও বলেন, যেন কোনো ভিডিও বা ছবিতে তাঁদের সহজে চিহ্নিত করা যায়।
আদালতের এই নির্দেশ অভিবাসন কার্যক্রমে জবাবদিহিতা বাড়ানোর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিচারকের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে— আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর জননিরাপত্তার পাশাপাশি মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দায়িত্বও সমানভাবে প্রযোজ্য।



