চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনাগুলো দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
স্কপের চট্টগ্রাম জেলা শাখার আয়োজনে বেলা ১১টার দিকে বাদামতলী মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে শতাধিক শ্রমিক অংশ নেন। শ্রমিকদের দাবি—নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ বন্দরের কোনো স্থাপনা বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া যাবে না। শ্রমিক নেতারা সতর্ক করে বলেন, এ সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে তাঁরা অনশনসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের বন্দর কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি নয়, এটি পুরো জাতির। শ্রমিকদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে এমন কৌশলগত স্থাপনা তুলে দেওয়া দেশের অর্থনীতি ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য বড় হুমকি। তাঁরা বলেন, বন্দরের শ্রমিকরা প্রতিদিন ঘাম ঝরিয়ে দেশের রাজস্ব বাড়াচ্ছেন, অথচ তাঁদের জীবিকা ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
শ্রমিক নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে বেতন ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্যের বিষয়ও। তাঁরা অভিযোগ করেন, কর্মকর্তাদের বেতন কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলেও সাধারণ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। শ্রমিকদের প্রবেশ পাসের খরচও অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা।
সমাবেশে বক্তারা ঘোষণা দেন, আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১০টায় অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। তাঁরা সাধারণ মানুষকেও এই আন্দোলনে সংহতি জানাতে আহ্বান জানান, কারণ বন্দরের ব্যয় বাড়লে এর প্রভাব ভোক্তা পর্যায়েও পড়বে।
সমাবেশ শেষে শ্রমিকরা আগ্রাবাদ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ সদস্যরা তাঁদের বাধা দেন। এতে কিছুক্ষণ উত্তেজনা দেখা দিলেও শ্রমিক নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সেখানেই কর্মসূচি শেষ করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্দর থানা এলাকায় ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিক নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করা হয়েছিল তাঁদের কর্মসূচি থানার সীমান্তের মধ্যেই শেষ করতে। পরে শ্রমিক নেতারা সেই আহ্বানে সাড়া দেন এবং আগ্রাবাদ এলাকাতেই কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।
শ্রমিকদের এই আন্দোলন ঘিরে বন্দরের আশপাশে সতর্ক অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সার্বিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ছিল বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, দাবিগুলো মানা না হলে তাঁরা পরবর্তী ধাপে আরও কঠোর কর্মসূচির পথে হাঁটবেন।



