বন্ধুত্ব কখনো মাঠে নেমে হাত বাড়ায়, আবার কখনো গ্যালারিতে বসে নীরব সমর্থনে শক্তি জোগায়। মরক্কোর রাজধানী রাবাতে মৌলে আবদেল্লাহ স্টেডিয়ামে গত রাতে ঠিক সেই দৃশ্যই দেখা গেছে। দর্শকসারিতে বসে বন্ধুর দলকে সমর্থন জানাতে হাজির ছিলেন ফরাসি ফুটবলের বড় তারকা এমবাপ্পে। তবে গ্যালারির এই উপস্থিতি শেষ পর্যন্ত মরক্কোর জন্য সুখকর পরিণতি বয়ে আনেনি। আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মালির সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করে স্বাগতিকরা থামিয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বিশ্ব রেকর্ড গড়া টানা ম্যাচ জয়ের দৌড়।
এই গল্পের শুরু কয়েক বছর আগের। ইতালির একটি ক্লাব ছেড়ে ২০২১ সালে ফ্রান্সের শীর্ষ ক্লাবে যোগ দেন মরক্কোর ডান প্রান্তের ডিফেন্ডার। তখন প্যারিসের সেই দলে খেলছিলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপ্পে। নতুন দলে এসে ভাষাগত সমস্যায় পড়েন মরক্কোর এই ফুটবলার। তিনি ফরাসি ভাষায় স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। অন্যদিকে এমবাপ্পে কিছুটা স্প্যানিশ জানতেন, যা মরক্কোর ডিফেন্ডারের জানা ছিল স্পেনের ক্লাবে খেলার সুবাদে। এই ভাষার মিল থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। ফরাসি ভাষা শেখাতে পাশে দাঁড়ান এমবাপ্পে। সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক আজও অটুট।
রাবাতের গ্যালারিতে উপস্থিতি ছিল সেই বন্ধুত্বেরই প্রতিফলন। ৬৪ হাজারের বেশি দর্শকের ভিড়ে মরক্কোর ডিফেন্ডারের দুই নম্বর জার্সি পরে বসেছিলেন ফরাসি তারকা। চোটের কারণে ম্যাচের স্কোয়াডে থাকলেও মাঠে নামতে পারেননি মরক্কোর এই ফুটবলার। বেঞ্চে বসেই সতীর্থদের লড়াই দেখেছেন তিনি। ফরাসি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বন্ধুই ব্যক্তিগতভাবে এমবাপ্পেকে ম্যাচটি দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমন্ত্রণ রক্ষা করতে তিনি তাঁর পরিবার ও ফুটবলার ভাইকেও সঙ্গে করে এনেছিলেন।
কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে গ্যালারির সমর্থন কাজে লাগাতে পারেনি মরক্কো। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা মালির বিপক্ষে ম্যাচটি শেষ হয়েছে ড্রয়ে। এই ড্রয়ের ফলে থেমে গেছে মরক্কোর টানা জয়যাত্রা। গত বছরের জুনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জাম্বিয়াকে হারিয়ে যে জয়রথ শুরু হয়েছিল, তা একে একে স্পেনের দীর্ঘদিনের রেকর্ডও ভেঙেছিল। একপর্যায়ে টানা ১৯ ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে মরক্কো। অবশেষে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে সেই দৌড় থামল।
ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে দুটি পেনাল্টিতে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ভিডিও সহকারী রেফারির সহায়তায় পেনাল্টি পায় মরক্কো। স্পটকিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন আক্রমণভাগের এক মিডফিল্ডার। বিরতির পর ৬৪ মিনিটে একইভাবে ভিএআর-এর সিদ্ধান্তে পেনাল্টি পায় মালি। গোল করে সমতায় ফেরান তাদের ফরোয়ার্ড। জয়ের আশা নিয়ে মাঠে আসা স্বাগতিক দর্শকেরা এই ফলাফল মেনে নিতে পারেননি। ম্যাচ শেষে মাঠ ছাড়ার সময় দুয়োধ্বনির মুখে পড়তে হয় মরক্কোর ফুটবলারদের।
যদিও ম্যাচের শুরুটা ছিল মরক্কোর দখলেই। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেন আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা। মাঝমাঠেও ছিল নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মালির সংগঠিত রক্ষণ ও সুযোগ কাজে লাগানোর দক্ষতায় ম্যাচে ফেরে তারা। শেষ পর্যন্ত আর কোনো দলই এগোতে পারেনি।
এই ড্রয়ের পরও মরক্কোর অপরাজিত থাকার ধারা অব্যাহত আছে। টানা ২২ ম্যাচে হারেনি দলটি। সর্বশেষ হার এসেছিল আগের আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের শেষ ষোলোতে। বর্তমান আসরে দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে মরক্কো। সমান ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে মালি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে জাম্বিয়ার মুখোমুখি হবে স্বাগতিকরা। জয় পেলেই শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত হবে।
ম্যাচ শেষে মরক্কোর এক মিডফিল্ডার বলেন, তৃতীয় ম্যাচেও একই মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামবে দল। লক্ষ্য একটাই, জয় দিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করা। অন্যদিকে গ্রুপের আরেক ম্যাচে গোলশূন্য ড্র হয়েছে কমোরোস ও জাম্বিয়ার মধ্যে। একই দিনে অন্য গ্রুপের ম্যাচগুলোতেও ড্র ও অল্প ব্যবধানে জয়ের ফল দেখা গেছে, যা টুর্নামেন্টের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।



