Sunday, December 28, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনগাজা যুদ্ধবিরতির মাঝেই ইরান ইস্যুতে দূরত্ব

গাজা যুদ্ধবিরতির মাঝেই ইরান ইস্যুতে দূরত্ব

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ইরান ইস্যুকে কেন্দ্র করে। এই উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতৃত্বের মধ্যে বাড়তে থাকা মতপার্থক্য। ইরানকে দীর্ঘদিন ধরেই নিজ দেশের পাশাপাশি গোটা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি হিসেবে তুলে ধরছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, তেহরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

এই অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গত জুনে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলার নির্দেশ দেন। তবে ওই হামলার পরও ইসরায়েল সন্তুষ্ট হয়নি বলে বিভিন্ন ইঙ্গিত মিলছে। বরং দেশটির পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। সফরকালে আগামীকাল সোমবার ফ্লোরিডার মার আ লাগো রিসোর্টে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে বলে জানা গেছে। ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, ২৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হয়ে এক দিন পর ফ্লোরিডায় বৈঠকে বসতে পারেন তাঁরা। তবে বৈঠকের নির্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

মধ্য ডিসেম্বরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বড়দিনের ছুটির সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ফ্লোরিডায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। চলতি বছরে এটি হবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর পঞ্চম যুক্তরাষ্ট্র সফর।

এই সফর এমন এক সময় হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন এবং আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীরা গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতিকে দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইরান ইস্যুতে নতুন করে চাপ তৈরি হওয়ায় কূটনৈতিক অঙ্গনে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা শুরু হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন বৈঠকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তেহরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে ওয়াশিংটনকে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পকে এবার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে সামনে আনা হচ্ছে। শুধু ইসরায়েলি কর্মকর্তারাই নন, তাঁদের কিছু মার্কিন মিত্রও প্রকাশ্যে ইরানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের কথা বলছেন। তাঁদের মতে, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে দ্রুত মোকাবিলা করা প্রয়োজন।

তবে বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, ইরানের সঙ্গে নতুন করে সংঘাতে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির একজন সিনিয়র ফেলো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বিস্তারের দিকে জোর দিচ্ছে, সেখানে ইসরায়েল আঞ্চলিক সামরিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে আনছে।

এই গবেষকের মতে, ইরানকে দুর্বল করতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী সামরিক সংশ্লিষ্টতা ও দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত ইসরায়েলের কৌশলগত লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে। তাঁর ভাষায়, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো অপ্রতিদ্বন্দ্বী আধিপত্য, প্রশ্নাতীত প্রভাব এবং সম্প্রসারণবাদ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আরও বলেন, এ লক্ষ্য পূরণে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পেতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী চাপ সৃষ্টি করছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ভিন্ন পথে এগোচ্ছে। ওয়াশিংটন সরাসরি সামরিক সম্পৃক্ততা ছাড়াই অঞ্চলটিকে আরও স্থিতিশীল করতে চায়। এই ভিন্নমুখী অবস্থান শেষ পর্যন্ত দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরছেন। যদিও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করছেন, তিনিই নাকি হাজার হাজার বছরে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের সদ্য প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য এখন সহযোগিতা, বন্ধুত্ব ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে এবং এটি আর যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কৌশলে প্রধান অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অঞ্চল নয়। ফলে অঞ্চলটিতে সামরিক ও কৌশলগত উপস্থিতি কমানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। ঠিক এমন সময়ে ইসরায়েল এমন এক সংঘাতের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে আবার সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে, ইরান ইস্যুতে ইসরায়েলের চাপের কাছে যুক্তরাষ্ট্র কতটা সাড়া দেবে। ইসরায়েলি নেতৃত্ব যতই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিজেদের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে তুলে ধরুক না কেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারবার জোর দিয়ে বলছেন, গত জুনে চালানো হামলার মাধ্যমে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে এবং দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি কার্যত শেষ হয়ে গেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments