মধ্যপ্রাচ্যে গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব এবং হামাসের আংশিক সম্মতি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বনেতারা এই অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন এবং সকল পক্ষকে শান্তি স্থাপনে ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, হামাসের আংশিক সম্মতি তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। তিনি সকল পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাজায় স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হামাসের এই পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পথে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামাসের আংশিক সম্মতি এবং সব জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতিকে স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়াও, কাতার ইসরায়েলকে গাজায় অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানানোর জন্যও প্রশংসা করেছে।
মিসরও হামাসের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং গাজায় শান্তি ও স্থিরতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মার্কিন নেতার বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশংসা করেছে। দেশটি আশা প্রকাশ করেছে, এই ইতিবাচক অগ্রগতি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় এবং সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে সাহায্য করবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন প্রচেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, এখন মূল অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এমন একটি যুদ্ধবিরতি, যা সব জিম্মির অবিলম্বে মুক্তির পথ তৈরি করবে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ২০ দফার একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। এই প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে, উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, হামাসের কাছে থাকা সকল জিম্মি মুক্তি দেওয়া এবং বিনিময়ে ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি প্রদান। এছাড়াও, ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে গাজা থেকে প্রত্যাহার এবং হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের কথাও বলা হয়েছে।
পরিকল্পনায় ভবিষ্যতে গাজা শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হবে। এছাড়াও, ভবিষ্যতে একটি স্বতন্ত্র ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে। হামাসকে রবিবার রাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল প্রস্তাব গ্রহণের জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, প্রস্তাব মেনে না নিলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে। কয়েক ঘণ্টা পর হামাস আংশিকভাবে প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসকে অস্ত্রসমর্পণ এবং বাকি জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ট্রাম্পের পরিকল্পনার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে কলম্বিয়ার সেনারাও এই শান্তি অভিযানে যোগ দিতে প্রস্তুত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাব্য ইঙ্গিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। ভারত স্থায়ী ও ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জনের সব প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
তবে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব নিয়ে কিছু সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পরিকল্পনা নিখুঁত নয়, কিন্তু ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন রক্ষা বর্তমান অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।
হামাস উল্লেখ করেছে, তারা আংশিকভাবে প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি, তবে বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ার মাঠপর্যায় শর্ত মানা আবশ্যক। বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যার মধ্যে ২০ জন জীবিত।
হামাস গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা করতে চায়। সংগঠনটি জানিয়েছে, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।