Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়গাজায় যুদ্ধবিরতি স্বস্তি এনেছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত

গাজায় যুদ্ধবিরতি স্বস্তি এনেছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত

গাজার মানুষের জীবনে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা স্বল্প সময়ের জন্য একটুখানি স্বস্তি এনেছিল। তবে সেই স্বস্তির নিচে লুকিয়ে আছে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা। প্রায় এক মাস পার হতে না হতেই বাস্তবতা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। সামরিক অভিযান থেমেছে বটে, কিন্তু ক্ষতচিহ্নগুলো এখনও রয়ে গেছে ধ্বংসস্তূপে, মানুষের শরীরে, আর নবজাতক শিশুদের জন্মের মুহূর্তেও।

যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল কিছু বন্দি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে এবং হামাসও কিছু জীবিত বন্দি ও নিহতদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে। তবুও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এখনো দূর। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় সাম্প্রতিক হামলায় ২০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে শিশু রয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে। হাজারো মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে—যা সরাতে শতাধিক ট্রাকের সাত বছর সময় লাগবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

মানবিক সাহায্য ধীরে ধীরে প্রবাহিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলের নতুন নিবন্ধন নীতির কারণে সাহায্য বিতরণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। গাজার যে অর্ধেক অঞ্চল এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, সেখানে ঘরবাড়ি ধ্বংসের কাজ অব্যাহত আছে। দুই বছরের যুদ্ধে ৯০ শতাংশের বেশি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে বলে সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের ভেতরেই সন্তান জন্ম দিচ্ছে—যেখানে নেই সঠিক চিকিৎসা, নেই আশ্রয়ের জায়গা।

যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখার আশঙ্কা এখনো কাটেনি। বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারী গোষ্ঠী সম্ভাব্য এক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছে, যাতে হামাস যোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণের শর্তে নিরাপদে রাফা অঞ্চল ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে এক কূটনৈতিক সূত্র সতর্ক করে বলেছেন, গাজা যেন “না যুদ্ধ, না শান্তি” এমন এক স্থবির অবস্থায় চলে না যায়—যেখানে মানুষ মারা যাবে, কিন্তু পুনর্গঠন সম্ভব হবে না।

এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি মূলত কঠিন প্রশ্নগুলোকে সাময়িকভাবে এড়িয়ে গিয়েই গঠিত হয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের প্রস্তাব এগিয়ে নিচ্ছে। তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে বহু জটিল বিষয়ের ওপর—বাহিনীর নেতৃত্ব, দেশগুলোর অংশগ্রহণ, ইসরায়েলি বাহিনীর সরে যাওয়া, এবং হামাসের অস্ত্র ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন এই যুদ্ধবিরতিকে টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী, কারণ এটি তাদের কূটনৈতিক সাফল্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবুও ফিলিস্তিনিদের জন্য স্থায়ী ন্যায়বিচার ও মর্যাদা নিশ্চিত না করলে এই শান্তি টেকসই হবে না। আঞ্চলিক রাজনীতি আবারও নতুন গতিপথ নিচ্ছে, যেখানে আরব বিশ্বের সমর্থন পুনরুদ্ধার না করলে স্থায়ী শান্তি অসম্ভব হয়ে পড়বে।

তবে আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ এখন ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে গাজা থেকে। কিছু ইউরোপীয় দেশ ইতিমধ্যে আগস্টে আরোপিত অস্ত্র রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বলছে। অন্যদিকে, গাজায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি এখনো সীমিত।

এই অবস্থায় গাজার মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সমাধান—যেখানে শুধু খাবার ও আশ্রয় নয়, থাকবে মর্যাদা ও ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। বিশ্বের নজর যদি এখন সরেও যায়, তবে এই যুদ্ধবিরতি হবে কেবল এক ক্ষণস্থায়ী বিরতি, যার পরই হয়তো আবার ধ্বংসযজ্ঞ ফিরে আসবে। তাই এখনই প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবিচল নজর, নিরন্তর চাপ, এবং মানবতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments