Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় যুদ্ধবিরতি ভাঙার আশঙ্কা, হামাসের সম্ভাব্য হামলার তথ্য জানাল যুক্তরাষ্ট্র

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভাঙার আশঙ্কা, হামাসের সম্ভাব্য হামলার তথ্য জানাল যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তাদের কাছে এমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে যে, স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস শিগগিরই গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ধরনের হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে এবং এর ফলে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের ওপর যেকোনো ধরনের আক্রমণ কেবল যুদ্ধবিরতি চুক্তিকেই নয়, বরং শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতিকেও বিপন্ন করবে।” এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হামাসকে সতর্ক করে জানানো হয়, যদি এমন হামলা চালানো হয়, তবে গাজার মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে এবং যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে মার্কিন পক্ষ থেকে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, বা তার প্রভাব কী হবে—সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে গাজার বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির জন্য হামাসকে দায়ী করে কঠোর সমালোচনা করেছেন।

বর্তমানে কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অধীনে হয়েছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক অভিযান বন্ধ করবে এবং এর বিনিময়ে হামাস গাজায় আটক থাকা জীবিত ও মৃত জিম্মিদের মুক্তি দেবে।

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, “যদি হামাস গাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা অব্যাহত রাখে, যা চুক্তির বাইরে, তবে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে হবে।” যদিও ‘আমাদের’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার মধ্য দিয়ে নতুন করে যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ইসরায়েলের দাবি, ওই হামলায় প্রায় ১,১০০ জনের মৃত্যু হয় এবং আরও আড়াই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করা হয়। প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করে। টানা দুই বছরের সংঘাতে গাজায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা এখন ৬৮ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

সম্প্রতি হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী চুক্তি কার্যকর হয়। তবে এই পরিস্থিতিতেই নতুন করে হামাসের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা জানানো হলো ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে। মার্কিন প্রশাসন জানায়, তারা মিসর, কাতার ও তুরস্কসহ যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তাদাতা দেশগুলোকে এই তথ্য জানিয়েছে।

এখন যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলছে, যেখানে বাকি থাকা জীবিত ও মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তারই মধ্যে হামাসের পুনরায় আক্রমণ পরিকল্পনার অভিযোগে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায় হামাস নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটি সম্প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, হামাস ইসরায়েলকে সহায়তাকারী সন্দেহে কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

সংগঠনটির অফিশিয়াল চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, চোখ বাঁধা অবস্থায় আটজন সন্দেহভাজনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। ভিডিওতে তাঁদের ‘শত্রুর সহযোগী’ ও ‘অবৈধ কাজে জড়িত’ বলে উল্লেখ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি গত সোমবার সন্ধ্যায় সংঘটিত হয়।

ওয়াশিংটন মনে করছে, এমন পদক্ষেপ শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং চলমান শান্তি প্রচেষ্টার জন্যও বড় বাধা হতে পারে। আন্তর্জাতিক মহল এখন নজর রাখছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি কতটা টিকে থাকে এবং এই সংকট কোন দিকে গড়ায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments