যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মিসরে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের দিনটি “বিশ্বের জন্য এক মহান দিন” হিসেবে ইতিহাসে লেখা হবে। প্রেসিডেন্টের ভাষ্য, এ দিনটি শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য এক আনন্দের ও সাফল্যের প্রতীক।
এক সংক্ষিপ্ত টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে পুরো বিশ্ব একতাবদ্ধ হয়েছে। ইসরায়েলসহ সব প্রাসঙ্গিক দেশ একসাথে এসেছে। আজকের দিনটি সত্যিই অসাধারণ।” তিনি আরও বলেন, “এটা সবার জন্য এক আনন্দের দিন এবং একটি দারুণ মুহূর্ত। বিশ্বের শান্তির পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
এ প্রসঙ্গে, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি বিষয়ক প্রেসিডেন্টের ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে হামাস ও ইসরায়েল উভয়ই একমত হয়েছে। এই সম্মতিই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে চমকপ্রদ এবং আশা জাগানো হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, “আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ইসরায়েল এবং হামাস—উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্য রাজি হয়েছে। খুব শিগগিরই সব জিম্মি মুক্তি পাবেন, এবং ইসরায়েল তাদের সেনাদের নির্ধারিত সীমায় সরিয়ে আনবে।”
এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিসরে চলমান আলোচনায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। চুক্তি চূড়ান্ত হলে তিনি মিসরে গিয়ে সেটি ঘোষণা করবেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পূর্বনির্ধারিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর মিসরে যেতে পারবেন। সম্ভাব্য সময় হবে শনি বা রোববার।
উভয় পক্ষের সম্মতিতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীও প্রেসিডেন্টকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং এর গুরুত্বকে “ইসরায়েলের জন্য একটি দারুণ দিন” হিসেবে অভিহিত করেছেন। আজকের দিনটিতে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা এ যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার অনুমোদন দিতে পারে। পাশাপাশি পার্লামেন্টে (নেসেট) প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানানো হবে।
গত মাসে ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন জিম্মি (২০ জন জীবিত) মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের অনেককেই মুক্তি দেওয়া হবে।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালায়। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, এ ঘটনায় ১,২১৯ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। তার পর থেকে গাজায় নৃশংসতা অব্যাহত থাকে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৭,১৭৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০,১৭৯ জন শিশু।
এই পরিস্থিতিতে বর্তমান যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি আশার বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।



