ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধে একটি বিস্তৃত ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবটি জানানো হয়েছে সোমবার। এতে বলা হয়েছে, পরিকল্পনার শর্তসমূহ উভয় পক্ষ—ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন—মেনে নিলে সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ থেমে যাবে।
গাজায় ইতিমধ্যে ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, আর পুরো অঞ্চল রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এ অবস্থায় পরিকল্পনায় যুদ্ধ থামানোর পাশাপাশি জিম্মি ও বন্দীদের বিনিময়, মানবিক সহায়তা, গাজার প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধ থামানোর পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আটক সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। একই সময়ে ইসরায়েল মুক্তি দেবে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ বন্দী ও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক হওয়া প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবেন। প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে।
চুক্তি কার্যকর হলে হামাসের যেসব সদস্য অস্ত্র ত্যাগ করবেন, তাঁদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। আবার যারা গাজা ছাড়তে চান, তাঁদের নিরাপদে অন্য দেশে যেতে দেওয়া হবে। অন্যদিকে, নতুন ব্যবস্থায় গাজার শাসনভার নেবে একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটি, যেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। এই কমিটিকে সহায়তা করবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’।
পরিকল্পনায় গাজার পুনর্গঠনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পানি, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে গাজাকে আধুনিক, বিনিয়োগবান্ধব শহরে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া নিরস্ত্রীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গাজার সব সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না। অস্ত্র জমা দেওয়ার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক তহবিল ব্যবহার করে সেগুলো ক্রয় করা হবে। পর্যবেক্ষক দল নিরপেক্ষভাবে এ প্রক্রিয়া তদারকি করবে।
নিরাপত্তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব অংশীদারদের সহযোগিতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স (আইএসএফ)’ গঠন করা হবে। বাহিনীটি গাজায় মোতায়েন হয়ে নিরাপত্তা রক্ষা, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে। গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ইসরায়েলি সেনারা ধাপে ধাপে সরে যাবে।
পরিকল্পনায় ধর্মীয় সহনশীলতার ভিত্তিতে আন্তধর্মীয় সংলাপ চালুর কথাও বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে শান্তির ভিত্তি মজবুত করার আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
সবশেষে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র গঠনের পথে নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করবে, যাতে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা তৈরি হয়।
এ ২০ দফা পরিকল্পনা কার্যকর হলে যুদ্ধ থামানো, বন্দী বিনিময়, মানবিক সহায়তা, পুনর্গঠন ও স্থায়ী শান্তির পথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।