গাজায় সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পরও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। রবিবার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, যুদ্ধবিরতি এখনো চলছে।”
ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, তারা হামাসের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে কারণ ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। তবে একইসঙ্গে ইসরায়েল জানায়, ওই হামলার পরপরই তারা পুনরায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দেন, এই হামলার পেছনে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব নয় বরং কিছু বিদ্রোহী দায়ী হতে পারে।
গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের দাবি, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা হতাহতের সংখ্যা যাচাই করছে। প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেছেন, তাঁর মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে এবং তা অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির পথ খুলে দিতে পারে।
তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই, হামাসের সঙ্গে এই যুদ্ধবিরতি শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাক। কিছু অনিয়মিত আচরণ দেখা গেলেও আমরা মনে করি নেতৃত্ব এতে সরাসরি জড়িত নয়।”
এর আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজা পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতির সময় কিছু উত্থান-পতন থাকবে, এটা স্বাভাবিক। তবে এখনই সবচেয়ে বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার।”
দুই বছরের ভয়াবহ সংঘাতের অবসান ঘটাতে চলতি বছরের ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের প্রাণঘাতী হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক পাল্টা অভিযান শুরু করে। দীর্ঘ এই যুদ্ধে প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং গাজার অধিকাংশ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
মার্কিন প্রশাসনের মধ্যস্থতায় হওয়া এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বন্দী ও জিম্মি বিনিময়, গাজা পুনর্গঠন এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা কাঠামো গঠনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে বাস্তবায়নের পথে নানা চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আহ্বান জানিয়েছেন, হামাসকে নিরস্ত্র করতে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং একটি নিরাপত্তা কাঠামো গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, “হামাসকে নিরস্ত্র করার জন্য উপসাগরীয় মিত্রদের উদ্যোগ এখনো যথেষ্ট নয়। স্থায়ী শান্তির জন্য এটি অপরিহার্য।”
এদিকে, পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মার্কিন প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইসরায়েল সফর করবেন বলে জানা গেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, “কে যাচ্ছেন সেটা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে আমি নিজেও যেতে পারি।”
ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির এই প্রক্রিয়া এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। গাজায় নতুন করে রক্তপাতের মাঝেও শান্তির সম্ভাবনা জিইয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।



