১৯৫৬ সালে প্রথমবার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন হয়েছিল মিসরের সিনাই উপদ্বীপ ও গাজায়। সুয়েজ খাল আক্রমণের প্রেক্ষাপটে গঠিত সে বাহিনী দেখিয়েছিল, আন্তর্জাতিক সদিচ্ছা থাকলে জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা, লাখো মানুষের প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও জাতিসংঘ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ছয়বার ভেটো দিয়েছে, যার ফলে যুদ্ধবিরতি কিংবা মানবিক সহায়তার পথ রুদ্ধ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থার পেছনে বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।
ইতিহাস বলছে, সুয়েজ সংকটের সময় নিরাপত্তা পরিষদ অচল হয়ে পড়লেও সাধারণ পরিষদ বিকল্প উদ্যোগ নিয়ে শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সাধারণ পরিষদও বিভক্ত। বড় শক্তিধর দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কার্যকর প্রস্তাব গৃহীত হচ্ছে না।
জাতিগত নিধন ঠেকাতে জাতিসংঘের রেকর্ডও হতাশাজনক। রুয়ান্ডা ও বসনিয়ার মতো ঘটনাগুলোতে তারা শুধু পরে স্বীকার করেছে যে গণহত্যা হয়েছে। গাজায়ও একই দৃশ্যপট—জাতিসংঘের তদন্ত সংস্থা ইসরায়েলকে দায়ী করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের গাজার ট্র্যাজেডির পার্থক্য হলো, এখানে যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমর্থকই নয়, কার্যত অংশীদার।
বিভিন্ন গবেষক মনে করছেন, জাতিসংঘের ব্যর্থতা আসলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ব্যর্থতা। সংস্থাটির কাছে নিষেধাজ্ঞা, শান্তিরক্ষী মিশন কিংবা জোট গঠনের মতো নানা ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগ করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের ভেটো এবং সমর্থনের কারণে জাতিসংঘ কার্যত অসহায়।
ফলাফল, গাজা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। লাখো নারী-শিশুর প্রাণহানি ঘটলেও জাতিসংঘ শুধু বিবৃতি ও অধিবেশনে সীমাবদ্ধ। ইতিহাস প্রমাণ করে, মহাশক্তিধর দেশগুলো যদি সক্রিয় না হয়, তবে গণহত্যা ঠেকাতে জাতিসংঘ একা কখনোই সক্ষম নয়।