খুলনায় নিজ বাড়ির ভেতরে মায়ের পাশে ঘুমন্ত এক তরুণকে জানালা দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাটি ঘটে নগরীর দৌলতপুর এলাকায় গভীর রাতে। এ সময় তরুণের পরিবার হঠাৎ গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া বাজারসংলগ্ন একটি একতলা ভবনে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ওই তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন এবং দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বুধবার সকাল সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা ঘরের জানালার থাই গ্লাস সরিয়ে সোজাসুজি ভেতরে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। মাথায় দুটি ও বাঁ হাতে একটি গুলি লাগায় তরুণটি মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে যান। ঘটনার সময় একই ঘরে তাঁর মা ও ছোট ভাইও ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁদের চোখের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটলেও তারা কিছুই করতে পারেননি।
নিহত তরুণ স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিলেন, তবে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তিনি সম্প্রতি বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এর আগে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি বেকার ছিলেন এবং পারিবারিকভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরের ভেতরে পরিবারের মাঝখানে থেকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তা পরিকল্পিত বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে প্রকৃত কারণ এখনো স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা পূর্বপরিকল্পনা করে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। জানালার কাচ খুলে টার্গেট করে গুলি চালানো হয়, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ঘটনাটি আকস্মিক নয়। তবে এখনো পর্যন্ত হত্যার সুনির্দিষ্ট কারণ বা কারা জড়িত তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত অব্যাহত আছে এবং শিগগিরই প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও শঙ্কা দুটিই বিরাজ করছে। অনেকেই বলছেন, একটি পরিবারের ভেতরে এভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা হওয়া নিরাপত্তাহীনতার ইঙ্গিত বহন করে। এ ঘটনায় আশপাশের মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে রাত জেগে থাকছেন এবং নিরাপত্তা জোরদারের দাবি তুলেছেন।
ময়নাতদন্ত শেষে নিহত তরুণের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং এলাকাজুড়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ঘটনায় পরিবার শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। মা বারবার ছেলের জন্য আহাজারি করছেন। প্রতিবেশীরাও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।
খুলনার দৌলতপুরের এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড স্থানীয়ভাবে আলোড়ন তুলেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এলাকাবাসী অপেক্ষায় থাকলেও, আতঙ্কের ছায়া তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।