যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে আদালত এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে তিন প্রযুক্তি জায়ান্টের বিরুদ্ধে চলমান মামলার আবেদনের খারিজ করে দিয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়েছিল। কিন্তু আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই মামলাগুলো খারিজ করার মতো যথেষ্ট ভিত্তি নেই।
মামলার মূল অভিযোগ হলো, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে ক্যাসিনো-স্টাইলের গেমিং অ্যাপ প্রচার করেছে এবং ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে লেনদেনের বিপরীতে কমিশন আদায় করেছে। এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করেছে এবং তা থেকে বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও সামাজিক সমস্যার জন্ম হয়েছে। মামলাকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে হতাশা, আত্মহত্যার প্রবণতা ও মানসিক অস্থিরতার মতো ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, প্ল্যাটফর্মগুলো শুধু অ্যাপ প্রচার করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং লেনদেন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ৩০ শতাংশ কমিশন কেটে নিয়েছে। আনুমানিকভাবে এই কমিশনের পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো নিজেদের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে মার্কিন কমিউনিকেশন ডিসেন্সি অ্যাক্টের ২৩০ ধারা ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এই আইনে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে তৃতীয় পক্ষের কনটেন্টের জন্য দায়মুক্তি দেওয়া হয়। তবে আদালত জানায়, যখন তারা নিজেরা অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত হয়, তখন এই দায়মুক্তির সুযোগ প্রযোজ্য নয়।
রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, এখানে মূল বিষয় হলো অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সোশ্যাল ক্যাসিনো অ্যাপের জন্য অর্থ লেনদেন করেছে। ব্যবহারকারীরা এসব অ্যাপ থেকে অর্থ ব্যয় করেছে, আর কোম্পানিগুলো সেই অর্থ গ্রহণ করেছে এবং তার একটি বড় অংশ কমিশন হিসেবে কেটে নিয়েছে। তাই এই প্রক্রিয়া তাদের দায়মুক্তি দেয় না।
যদিও কিছু অঙ্গরাজ্যের আইনভিত্তিক অভিযোগ খারিজ করা হয়েছে, তবে ভোক্তা সুরক্ষা আইনের আওতায় আনা বেশিরভাগ অভিযোগই বহাল রাখা হয়েছে। কেবল ক্যালিফোর্নিয়ার ভোক্তা সুরক্ষা সংক্রান্ত দাবি বাতিল করা হয়েছে।
আদালতের সিদ্ধান্তে আরও বলা হয়, এই মামলাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাই অভিযুক্তরা চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে আপিল আদালতে যেতে পারবে। এর আগে ২০২৪ সালের মে মাসে আপিল আদালত এ ধরনের একটি আপিল খারিজ করেছিল, কারণ তখন তা বিচারাধীন অবস্থায় ছিল।
প্রসঙ্গত, এই মামলাগুলো ২০২১ সালে শুরু হয় এবং বর্তমানে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল কোর্টে একীভূতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। মামলাগুলোতে ক্ষতিপূরণসহ তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে, যা এখনো নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।
এই রায় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ তারা এতদিন ধরে নিজেদের দায়মুক্ত রাখার জন্য যে আইনি কাঠামো ব্যবহার করত, তা এবার আদালতে প্রত্যাখ্যাত হলো। ফলে ভবিষ্যতে প্ল্যাটফর্মভিত্তিক আরও অনেক ব্যবসায়িক কার্যক্রম একইভাবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।