ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রশাসন নাগরিক অধিকার আইনকে ব্যবহার করে শিক্ষাগত স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করার চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ)-কে ১.২ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে এবং গবেষণা অনুদান স্থগিত করে প্রশাসন। অভিযোগ করা হয়, ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ সহ বিভিন্ন নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বড় ধরনের অনুদান স্থগিতের ঘটনা। একই অভিযোগে হার্ভার্ড, ব্রাউন ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মামলার নথি অনুসারে, ইউসিএলএ-এর জন্য প্রস্তাবিত সমঝোতা চুক্তিতে প্রশাসনের বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সরকারকে প্রদান, ভর্তি ও নিয়োগের তথ্য প্রকাশ, বৈচিত্র্যভিত্তিক বৃত্তি বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাতভর প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করা এবং অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যদিও তারা সরাসরি এই মামলার পক্ষ নয়, তবুও তহবিল পুনঃস্থাপনে বিভিন্ন আইনি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গবেষণা তহবিল কেটে দেওয়ার ফলে প্রাণরক্ষাকারী বায়োমেডিকেল গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা হ্রাস পাবে এবং জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে।
মামলাটি দায়ের করেছে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস ইউনিয়ন (AAUP), যাদের পক্ষে কাজ করছে আইনি প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ফরোয়ার্ড। মামলায় বলা হয়েছে, হঠাৎ ও একতরফাভাবে গবেষণা অনুদান বন্ধ করা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও জনস্বার্থের ওপর আঘাত।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের নাগরিক অধিকার শাখা একাধিক তদন্ত শুরু করেছে, যা কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং বিভিন্ন স্কুল ডিস্ট্রিক্টকেও লক্ষ্য করছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জানান, প্রশাসন তাদের সবগুলো ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে তদন্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিবছর ১৭ বিলিয়নেরও বেশি ডলার ফেডারেল তহবিল পায়, যার মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণার জন্য বরাদ্দ থাকে।
উল্লেখযোগ্য যে, সম্প্রতি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেল বৈষম্যবিরোধী আইন ভঙ্গের অভিযোগে ২০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে সম্মত হয়েছে এবং এর বিনিময়ে ৪০০ মিলিয়নের বেশি গবেষণা অনুদান পুনঃস্থাপিত হয়েছে। প্রশাসন এখন এটিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একটি মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করছে।