কোমর থেকে নিতম্ব এবং পা পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা ব্যথা অনেক সময় ‘সায়াটিকা’ হিসেবে পরিচিত হলেও সব ক্ষেত্রেই এটি ডিস্ক সরে যাওয়ার কারণে ঘটে না। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো পাইরিফরমিস সিনড্রোম।
পাইরিফরমিস হল নিতম্বের গভীরে থাকা একটি ছোট পেশি। এ পেশির পাশ দিয়ে সায়াটিক নার্ভ নামের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুটি পায়ের দিকে নেমে যায়। যদি এই পেশি অতিরিক্ত সংকুচিত বা ফুলে যায়, তাহলে সায়াটিক নার্ভে চাপ পড়ে এবং কোমর থেকে নিতম্ব ও পা পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।
এ সিনড্রোম সাধারণত ঘটে পেশির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে, যেমন বেশি হাঁটা, দৌড়ানো বা খেলাধুলা। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, নিতম্বে আঘাত, পায়ের দৈর্ঘ্যের অমিল বা হাঁটার ভঙ্গির সমস্যা এটিকে আরও প্রবণ করে।
লক্ষণগুলো হলো: নিতম্বে গভীর ব্যথা যা বসার বা হাঁটার সময় বেড়ে যায়, কোমর থেকে উরুর পেছনে এবং পায়ের নিচ পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়া, চেপে ধরলে ব্যথা বৃদ্ধি এবং কখনও ঝিনঝিন বা টানটান অনুভূতি।
সঠিক নির্ণয়ের জন্য কিছু শারীরিক পরীক্ষা বা ক্লিনিক্যাল টেস্ট প্রয়োজন। মাসকুলোস্কেলিটাল আলট্রাসাউন্ডে দেখা যেতে পারে পেশি মোটা হয়ে যাওয়া বা সায়াটিক নার্ভে চাপ। অন্য কারণ যেমন ডিস্ক প্রোলাপ্স সন্দেহ হলে এমআরআই করতে হয়। পাইরিফরমিসে লোকাল অ্যানেস্থেটিক প্রয়োগ করলে ব্যথা কমলে রোগনির্ণয়ে সহায়তা হয়।
চিকিৎসায় প্রাথমিক লক্ষ্য ব্যথা কমানো ও পেশি ঢিলা করা। মাঝারি পর্যায়ে নিতম্বের নড়াচড়া বাড়ানো ও হাঁটার ক্ষমতা উন্নত করা হয়। দীর্ঘমেয়াদে রোগীকে পুনরায় ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়।
পরামর্শ: দীর্ঘ সময় বসবেন না, শক্ত মেঝেতে বসবেন না, কাত হয়ে ঘুমালে দুই হাঁটুর মাঝখানে বালিশ রাখবেন। আরামদায়ক চেয়ার ব্যবহার করুন। গরম সেঁক, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি ও টেনস ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পাইরিফরমিস স্ট্রেচিং, হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ এবং কোমর-নিতম্বের পেশি শক্ত করার ব্যায়াম করুন। ম্যানুয়েল থেরাপি যেমন মায়োফেসিয়াল বা ট্রিগার পয়েন্ট রিলিজ এবং আলট্রাসনোগাইডেড স্টেরয়েড/বটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন দ্রুত আরাম দেয়। সঠিক নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে এই ব্যথা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।