গুগল মালিকানাধীন ইউটিউব ঘোষণা দিয়েছে যে, কোভিড-১৯ এবং নির্বাচন সম্পর্কিত ভ্রান্ত তথ্য প্রকাশের অভিযোগে যেসব নির্মাতার চ্যানেল স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তারা শিগগিরই পুনরায় ফিরতে আবেদন করতে পারবেন। এতদিন এ ধরনের অপরাধে আজীবন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলেও এবার নীতিতে বড় পরিবর্তন আনছে প্ল্যাটফর্মটি।
সম্প্রতি এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, ইউটিউবের বর্তমান কমিউনিটি গাইডলাইনস এখন কোভিড এবং নির্বাচন সততার বিষয়ে আরও বিস্তৃত মতামত প্রকাশের সুযোগ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি এক সীমিত পর্যায়ের পরীক্ষামূলক উদ্যোগ শুরু করতে যাচ্ছে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু নির্মাতা এবং পূর্বে নিষিদ্ধ হওয়া চ্যানেলগুলোকে পুনর্বহালের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে।
ইউটিউব জানিয়েছে, নতুন এই কর্মসূচি খুব শিগগিরই চালু হবে। তবে কোন কোন চ্যানেল ফিরতে পারবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অতীতে কোভিড বা নির্বাচনভিত্তিক ভ্রান্ত তথ্য প্রচারের অভিযোগে অনেক জনপ্রিয় চ্যানেল বন্ধ হয়েছিল। এখন দেখা বাকি, তারা পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে পারে কি না।
এই সিদ্ধান্তকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান রাজনৈতিক চাপের সঙ্গে তুলনা করছেন। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল—তারা বাইডেন প্রশাসনের সময় ভ্যাকসিন ও রাজনৈতিক ভুল তথ্য নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সেন্সরশিপ চালিয়েছে। ২০২১ সালে ইউটিউব জানিয়েছিল, অনুমোদিত সব ধরনের ভ্যাকসিন নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য প্রচার করলে তা প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে ফেলা হবে।
তবে নতুন করে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মহামারির সময় উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক চাপের মুখে ইউটিউবকে কিছু ভিডিও মুছে ফেলতে হয়েছিল, যদিও তা নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন ছিল না। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির আইন উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন, ওই চাপ ছিল ‘অগ্রহণযোগ্য ও ভুল’।
উল্লেখ্য, ইউটিউব গত ডিসেম্বর মাসে তাদের বিশেষ কোভিড-১৯ ভ্রান্ত তথ্যবিষয়ক নীতি বাতিল করেছে। এখন থেকে প্ল্যাটফর্মটি তৃতীয় পক্ষের ফ্যাক্ট-চেকারদের ব্যবহার করবে না। বরং তারা বলছে, স্বাধীন মতপ্রকাশকে গুরুত্ব দিয়ে যাবেন। তবে ইউটিউব তাদের কনটেন্টে তথ্যসংক্রান্ত প্রেক্ষাপট যোগ করতে বিশেষ প্রোগ্রাম ব্যবহার করছে, যাতে দর্শকরা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পেতে পারেন।
অন্যদিকে, মেটাও চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছে যে, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তাদের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়েছে। যদিও ইউটিউব এখনও কনটেক্সট প্যানেল বা ইনফরমেশন লেবেল প্রদর্শন করে, যেখানে স্বাধীন সূত্র থেকে তথ্য সরবরাহ করা হয়।
এছাড়া, ২০১৭ সালে গুগল সার্চ ও নিউজ ফলাফলে ফ্যাক্ট-চেক লেবেল চালু করে। এই উদ্যোগগুলো মূলত দর্শকদের জন্য অতিরিক্ত প্রেক্ষাপট নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছিল।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ইউটিউবের নতুন নীতি নির্মাতাদের জন্য এক বড় পরিবর্তন বয়ে আনছে। যারা আগে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ছিলেন, তাদের এখন ফিরতে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে। ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্ল্যাটফর্মের নীতির মধ্যে এক নতুন ভারসাম্য গড়ে উঠতে পারে।