Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeকমিউনিটি সংবাদকুইন্সের আলোচিত রঙিন বাড়ির আড়ালে প্রতারণার কাহিনি

কুইন্সের আলোচিত রঙিন বাড়ির আড়ালে প্রতারণার কাহিনি

নিউইয়র্কের কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় অবস্থিত তিনতলা এক বাড়ি এখন সবার নজরে। বাইরে থেকে এই বাড়িটি যেন রঙের উৎসব—হালকা হলুদ দেয়াল, লাল জানালার ফ্রেম আর গেটজুড়ে ঝলমলে নকশা। ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে ক্যান্ডি ল্যান্ডের মতো সাজসজ্জা—গোলাপি কৃত্রিম গাছ, রঙিন ঝাড়বাতি এবং নানা রঙের সোফা।

এই বাড়ি স্থানীয় স্থাপত্যের সাথে একেবারেই বেমানান হলেও আলোচনায় উঠে এসেছে মূলত অন্য কারণে। দীর্ঘদিন ধরে কুইন্সে বসবাসরত এক দম্পতির মালিকানাধীন এই বাড়িটি ২০২৪ সালে বিক্রির জন্য বাজারে ওঠে ৩ মিলিয়ন ডলারের মূল্যে। তাদেরকে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আভিজাত্যপূর্ণ জীবনযাপন ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসার জন্য চেনা হলেও পরে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ প্রতারণার ঘটনা।

২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া একাধিক বিনিয়োগ চুক্তির আড়ালে মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এক বিনিয়োগকারী জানালেন, দীর্ঘদিনের পরিচিতি ও বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাকে কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। একই কৌশলে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী প্রতারণার শিকার হন। অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ভুয়া দলিলপত্র তৈরি করে সম্পত্তি কেনাবেচার নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

২০২৩ সালে ফেডারেল কোর্টে অভিযুক্ত স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর ২০২৪ সালের জুনে তিন বছরেরও বেশি কারাদণ্ড ও প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের রায় দেওয়া হয়। অপরদিকে, ভুক্তভোগীদের অনেকে এখনও ক্ষতির সঠিক প্রতিকার পাননি।

অভিযুক্ত পরিবারের মালিকানাধীন বিভিন্ন সম্পত্তি একাধিকবার নাম পরিবর্তন ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ঘোরানো হয়েছে বলে সরকারি নথিতে উঠে এসেছে। এমনকি অ্যাস্টোরিয়ার রঙিন বাড়ি ও জ্যামাইকা এলাকার আরেকটি ভবনের ওপর সরকার লিয়েন জারি করেছে, যাতে ভুক্তভোগীদের অর্থ ফেরত নিশ্চিত করা যায়।

স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকে জানাচ্ছেন, অভিবাসী জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও বিশ্বাসকেই হাতিয়ার বানিয়ে প্রতারণার এই জাল বিছানো হয়েছিল। লজ্জা, ভয়ের কারণে অনেকে সামনে আসতে সাহস পাননি। এদিকে, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ—অর্থ হারানোর পাশাপাশি তারা মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বর্তমানে বাড়িটির দাম কমিয়ে ২.৫ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হলেও লিয়েনের কারণে বিক্রির প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। অভিযুক্তকে ২০২৮ সালে কারামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতি পূরণ হবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments