Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যকান্না নয়, তবু কেন চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে?

কান্না নয়, তবু কেন চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে?

চোখ আমাদের দৃষ্টিশক্তির অন্যতম প্রধান অঙ্গ, আর এই চোখের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে চোখের পানি। অনেকেই ভাবেন চোখ থেকে পানি ঝরা মানেই কান্না। কিন্তু সবসময় যে বিষয়টি কান্নার সঙ্গে যুক্ত, তা নয়। বরং চোখ থেকে পানি ঝরার পেছনে রয়েছে নানান শারীরবৃত্তীয় কারণ।

স্বাভাবিক অবস্থায় চোখের মণির সামনে একটি পাতলা স্বচ্ছ পানির স্তর থাকে। এটি চোখকে ভিজিয়ে রাখে, স্বচ্ছ রাখে এবং ময়লা বা ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে। প্রতি মিনিটে নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি তৈরি হয় ও নির্দিষ্ট পথে চোখ থেকে নিষ্কাশিত হয়। এই পানি মূলত নেত্রনালির মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে নাকের ভেতর দিয়ে গলার দিকে চলে যায়।

কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন কোনো কারণে এই প্রবাহপথ বন্ধ হয়ে যায় অথবা নেত্রনালি সরু হয়ে যায়। এর ফলে চোখ থেকে পানি ঠিকভাবে নিষ্কাশিত হতে না পেরে বাইরে ঝরতে থাকে। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে ঘন ঘন জীবাণুর সংক্রমণও যুক্ত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিকল্প পানিনিষ্কাশনের পথ তৈরি করা হয়।

চোখের পানি ঝরার সাধারণ কারণ:

  • চোখে ধুলাবালি বা ময়লা ঢোকা

  • চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া

  • চোখে সংক্রমণ বা প্রদাহ হওয়া

  • নেত্রনালির প্রবাহপথ সংকুচিত বা বন্ধ হয়ে যাওয়া

শিশুদের ক্ষেত্রেও সমস্যা:

চোখ থেকে পানি পড়ার সমস্যা কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের নয়, শিশুদেরও হতে পারে। অনেক শিশুই জন্মগতভাবে এই সমস্যায় ভোগে। দেখা যায়, জন্মের পরপরই শিশুর এক বা দুই চোখ সবসময় ভেজা থাকে, মাঝেমধ্যে ময়লা জমে থাকে এবং কিছুদিন পর তা আরও বেড়ে যায়। এর পেছনে মূল কারণ হলো নেত্রনালির গঠনগত ত্রুটি।

সাধারণত গর্ভাবস্থার আট মাসে শিশুর নেত্রনালির গঠন সম্পন্ন হয়। কিন্তু জন্মের সময় কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এর শেষ অংশটি একটি পাতলা আবরণ দিয়ে বন্ধ থাকে। জন্মের পরও যদি এই অংশটি না খোলে, তবে শিশুর চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরে, চোখে পিঁচুটি হয় এবং ঘন ঘন সংক্রমণ দেখা দেয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি:

এমন পরিস্থিতিতে প্রথমে শিশুর চোখ পরিষ্কার রাখতে বলা হয় এবং জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি অভিভাবকদের এক ধরনের বিশেষ ম্যাসাজ শেখানো হয়। এই ম্যাসাজ নিয়মিত করলে অনেক সময় ওই পাতলা আবরণ নিজে থেকেই খুলে যায় এবং স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে আসে। সাধারণত ৬ থেকে ১০ মাস বয়স পর্যন্ত এই ম্যাসাজ চালিয়ে যাওয়া যায়। এরপরও যদি চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে, তবে বয়স অনুযায়ী আরও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

তবে মনে রাখতে হবে, শিশুদের চোখ থেকে পানি পড়া সবসময় নেত্রনালির সমস্যার কারণে হয় না। অনেক ক্ষেত্রে এটি জন্মগত গ্লুকোমার একটি লক্ষণ হতে পারে। এ রোগে চোখ বড় হয়ে যায়, শিশুটি আলোতে তাকাতে চায় না এবং চোখ থেকে পানি ঝরে।

বিশেষ পরামর্শ:

চোখ থেকে পানি ঝরা যদি বারবার ঘটে, শিশু বা বড় কারও ক্ষেত্রেই হোক, তবে অবহেলা করা ঠিক নয়। সময়মতো চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, এটি হয়তো একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে, আবার অনেক সময় জটিল সমস্যার প্রাথমিক ইঙ্গিতও হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments