Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়কপ৩০ সম্মেলনে ব্রাজিলে অংশ নেওয়া জরুরি: সময় নষ্ট না করে সিদ্ধান্ত নিতে...

কপ৩০ সম্মেলনে ব্রাজিলে অংশ নেওয়া জরুরি: সময় নষ্ট না করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে

এক মাসের মধ্যে এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন, কপ৩০, অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ব্রাজিলের বেলেম শহরে। সম্মেলনের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে, এই সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা এখনও সর্বশেষ দেশের নির্ধারিত প্রতিশ্রুতির (NDC) উপর ভিত্তি করে হিসাব প্রকাশ করেননি। তবে ইতিমধ্যেই বোঝা যাচ্ছে যে বর্তমান কার্বন নিঃসরণ প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়। গত বছরই প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রম হয়েছে। যদি শক্তিশালী পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই সীমা ছাড়ানো স্থায়ী হতে পারে, যার ফলে মানুষ ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুলা তাঁর কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও পক্ষগুলিকে একত্রিত করার চেষ্টা করছেন। এই প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী নেতাদের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ, যেমন দশ বছর আগে প্যারিস সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতি উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়েছিল। এই কারণে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীও সম্মেলনে অংশ নেওয়া উচিত। যদিও তিনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা নন, তবে তাঁর উপস্থিতি নৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে অপরিহার্য। এছাড়া রাজপ্রাসাদের পক্ষ থেকেও সফরের সমর্থন থাকলে, নরম শক্তি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

যুক্তরাজ্য ইতিহাসের মধ্যে অন্যতম বড় দূষক দেশ, কারণ এখানকার প্রাথমিক শিল্পায়ন এবং সাম্রাজ্যবাদের সময়কালেই কার্বন নিঃসরণ বেশি হয়েছিল। তবে গত দুই দশকের জলবায়ু নীতি অন্যান্য ধনী দেশের তুলনায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী। যুক্তরাজ্যের NDC বিশেষজ্ঞরা এমন একটি প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখেন যা ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্যকে রক্ষা করতে সহায়ক। তাই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ব্রাজিলে উপস্থিতি এবং প্রমাণভিত্তিক নীতির পক্ষে দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কপ৩০ সম্মেলন ব্রিটেনে জলবায়ু রাজনীতির একটি সংকটময় মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। টোরি সরকারের ক্লাইমেট চেঞ্জ আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি ছিল নির্বাচনী কৌশল, যা বিজ্ঞান-বিরোধী ও ট্রাম্পিয়ান মতাদর্শের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের অংশ। লেবার পার্টিকে এই চাপে পিছিয়ে পড়া উচিত নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে বেলেম সফর না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এটি সাহসী বা সঠিক পদক্ষেপ হবে না। বরং, তাকে জাতীয় লক্ষ্য এবং কপ প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে হবে, নিশ্চিত যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া যথাযথ এবং জনপ্রিয়।

অবশ্যই, একমাত্র যুক্তরাজ্যের নেতা নয়, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নেতারা এবং ইইউ, চীন, ভারত ও জাপানের নেতারাও এই সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া উচিত। প্রাক্তন জাতিসংঘ মহাসচিবের কথায়, অংশগ্রহণ কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং নেতৃত্ব প্রদানের পরীক্ষা। তিনি সতর্ক করেছেন যে, বিশ্ব পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইতিহাস মনে রাখবে কে উপস্থিত হয়েছে।

গত নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিজয় বৈশ্বিক সবুজ শক্তি রূপান্তরের জন্য বিপজ্জনক, তবে এটি অন্য সরকারগুলোর জন্য দায়িত্ব বৃদ্ধি করার কারণও। হয়তো লুলা এমন প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবেন যে ট্রাম্পও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবেন। এই মুহূর্তটি স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে যে, জলবায়ু কূটনীতিতে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সময় নষ্ট না করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্রাজিল সফরে যাওয়া এখন অপরিহার্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments