শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিরের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আগামী শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শনিবার গভীর রাতের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ভাষণে তিনি বলেন, জাতি একজন সাহসী ও দায়িত্বশীল নাগরিককে হারিয়েছে, যার আত্মত্যাগ রাষ্ট্রের ইতিহাসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে জানান, রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে শনিবার দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। একই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে দেশের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ ওসমান হাদিরের প্রতি সম্মান জানানো হবে এবং তাঁর আত্মত্যাগের স্মরণে জাতি একাত্মতা প্রকাশ করবে।
ভাষণে আরও বলা হয়, শহীদ ওসমান হাদিরের রুহের মাগফিরাত কামনায় আগামী শুক্রবার বাদ জুমা দেশের প্রতিটি মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয়গুলোতেও তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিককে শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশে অংশ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে শহীদ ওসমান হাদিরের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, এই মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের জন্য নয়, বরং সমগ্র জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। রাষ্ট্র এই শোকের মুহূর্তে শহীদের পরিবারের পাশে থাকবে এবং তাঁদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কোনো ঘাটতি রাখবে না।
ভাষণে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, শহীদ ওসমান হাদিরের শোকসন্তপ্ত স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। তাঁদের নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নয়, বরং শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি বাস্তব প্রতিফলন।
তিনি আরও বলেন, জাতির সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্ব পালনের পথে যারা জীবন উৎসর্গ করেন, তাঁদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। শহীদ ওসমান হাদিরের মৃত্যু সেই দায়িত্ববোধকে আরও জোরালো করেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ত্যাগ যেন যথাযথভাবে স্বীকৃতি পায়, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসীকে শোকের এই দিনে সংযম ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, এই রাষ্ট্রীয় শোক শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের সম্মিলিত বেদনা, শ্রদ্ধা ও সংহতির প্রকাশ। শহীদ ওসমান হাদিরের আত্মত্যাগ জাতিকে ন্যায়, দায়িত্ব ও মানবিকতার পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।
রাষ্ট্রীয় শোক পালনের মাধ্যমে শহীদ ওসমান হাদিরের স্মৃতি জাতির ইতিহাসে সংরক্ষিত থাকবে এবং তাঁর অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে ভাষণে উল্লেখ করা হয়।



