ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান বিন হাদির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতে তিনি আহত নেতার সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হামলার সঙ্গে জড়িত সম্পূর্ণ চক্রকে আইনের আওতায় আনার দৃঢ় আশ্বাস দেন।
শনিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন আহত নেতার ভাই, বোন এবং ইনকিলাব মঞ্চের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। সাক্ষাৎকালে পরিবারের সদস্যরা তাঁর শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় এবং হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশের মানুষ তাঁর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছে। সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। শারীরিক অবস্থার প্রয়োজন অনুযায়ী যদি দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়, সরকার সেক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে। চিকিৎসা নিয়ে কোনো ধরনের ঘাটতি রাখা হবে না বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
হামলার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি একটি নৃশংস ও অমানবিক ঘটনা। এই ঘটনার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঘটনার পেছনের কারণ, পরিকল্পনা এবং জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আহত নেতার বোন আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁর ভাই দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ছিলেন। তিনি সব সময় দেশ ও মানুষের জন্য ভাবতেন এবং বিপ্লবী চেতনায় বিশ্বাস করতেন। বিদ্রোহী কবিতা তাঁর খুব প্রিয় ছিল এবং তিনি নিয়মিত সেগুলো আবৃত্তি করতেন। তাঁর একটি মাত্র দশ মাস বয়সী সন্তান রয়েছে এবং পরিবারের জন্য তিনি ছিলেন ভরসার জায়গা। তাঁর মতে, আহত এই নেতা শুধু একজন ব্যক্তি নন, বরং একটি আদর্শের প্রতীক। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা দেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এই আন্দোলন ও বিপ্লবের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই সরকারকে জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।
ইনকিলাব মঞ্চের এক নেতা বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে এবং তার পেছনের পুরো নেটওয়ার্ক উন্মোচন করা জরুরি। তিনি জানান, আহত নেতা জুলাই বিপ্লবের আদর্শকে ধারণ করতেন এবং সেই লক্ষ্যেই দিনরাত কাজ করে গেছেন। তাঁর ওপর হামলা মানে সেই আদর্শের ওপর আঘাত।
আরেক নেতা দাবি করেন, যে ব্যক্তি গুলি চালিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, সে আগে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছিল, সেটিও তদন্তের আওতায় আনা প্রয়োজন। এতে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে বলে তিনি মনে করেন।
জুলাই যোদ্ধাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান ইনকিলাব মঞ্চের আরেক নেত্রী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ না হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিঘ্নিত হবে।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আইন, পরিবেশ, শিল্প এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টারাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই ঘটনাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
