ওরেগনের ফেডারেল আদালত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। শুক্রবার আদালতের এক নির্দেশে বলা হয়েছে, অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন দমন করতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা ছিল বেআইনি। আদালত স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানিয়েছে—এই মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও ফেডারেল আইনের পরিপন্থী।
মামলার বিচারক তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছেন, ওরেগনে “বিদ্রোহ বা বিদ্রোহের আশঙ্কা” ছিল না এবং প্রেসিডেন্ট “নিয়মিত বাহিনী দিয়েই আইন বাস্তবায়নে সক্ষম” ছিলেন। তাই ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোকে তিনি সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করেন।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আদালত স্পষ্ট করেছে যে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে” সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
ওরেগনের গভর্নর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা ছিল “ক্ষমতার অপব্যবহার”। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ওরেগন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা ৩৮ দিন ধরে পরিবার ও কর্মস্থল থেকে দূরে অবস্থান করছেন। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পাঠানো বাহিনীও এক মাসের বেশি সময় ধরে সেখানে রয়েছে। তিনি রায়ের পর প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছেন—সব সেনা সদস্যকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য।
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল এই সিদ্ধান্তকে “আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিজয়” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট তাঁর “বৈধ ক্ষমতা” প্রয়োগ করেই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিলেন, এবং প্রশাসন উচ্চ আদালতে আপিল করার পরিকল্পনা করছে। তাঁর ভাষায়, “আমেরিকার শহরগুলোতে বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না।”
আদালতের এই রায় আসলে একটি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর এসেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রশাসনের নির্দেশে প্রতিরক্ষা দপ্তর প্রায় ২০০ জন সেনা সদস্যকে ওরেগনে পাঠিয়েছিল। অভিবাসন নীতি বিরোধী বিক্ষোভের সময় স্থানীয় ও ফেডারেল কর্মকর্তাদের মধ্যে সংঘর্ষের পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ওরেগনের স্থানীয় সরকার এবং শহর কর্তৃপক্ষ ২৮ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা দায়ের করে, যেখানে বলা হয়—ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধ। এরপর আদালত ৪ অক্টোবর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং পরের দিনই অন্য রাজ্য থেকে পাঠানো গার্ডদেরও মোতায়েন বন্ধের নির্দেশ দেয়।
বিচারক তাঁর আদেশে উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট “অতিরঞ্জিত তথ্যের ভিত্তিতে” সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রশাসনের বক্তব্যে বলা হয়েছিল, ওরেগন “যুদ্ধবিধ্বস্ত” এবং অভিবাসন দপ্তরের স্থাপনাগুলো “নিয়মিত হামলার মুখে” রয়েছে, যা আদালত প্রমাণের অভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “প্রেসিডেন্টের এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না।”
তবে বিচার বিভাগের আইনজীবীরা আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে যুক্তি দেখান যে, এই নিষেধাজ্ঞা “প্রেসিডেন্টের সামরিক কমান্ডের ওপর হস্তক্ষেপ” এবং “ফেডারেল কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি” করছে। তাঁদের দাবি, শহরে সহিংসতা ও সম্পত্তি ক্ষতির কারণে গার্ড মোতায়েনের যথেষ্ট কারণ ছিল।
ওরেগনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফেডারেল পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম।
বর্তমানে বিচার বিভাগের করা আপিল নবম সার্কিট আপিল আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। একই ধরনের আরেকটি মামলা শিকাগোতেও চলছে, যেখানে সামরিক মোতায়েনের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। সেই মামলা এখন সর্বোচ্চ আদালতের পর্যালোচনায় রয়েছে।
ওরেগন মামলার এই রায় যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর স্বশাসন ও নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষে এক বড় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।



