সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বড় ধরনের পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি রাজধানীর মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগকে সরাসরি ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার এবং জননিরাপত্তা জোরদার করতে ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপকে তার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সোমবার হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, “আমাদের রাজধানী এখন সহিংস গ্যাং ও রক্তপিপাসু অপরাধীদের দখলে।” তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। তবে ওয়াশিংটনের বর্তমান ডেমোক্র্যাট মেয়র মুরিয়েল বাউসার ট্রাম্পের এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মেয়র বলেন, ২০২৪ সালে শহরে অপরাধের হার গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল এবং চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে তা আরও ২৬ শতাংশ কমেছে। তিনি ট্রাম্পের মন্তব্যকে ভুল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেন।
ট্রাম্পের এই উদ্যোগকে অনেকেই রাজনৈতিকভাবে সমালোচনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। সমালোচকদের অভিযোগ, তিনি কৃত্রিমভাবে একটি সংকট তৈরি করে ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহরগুলোতে তার নির্বাহী ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত কয়েক দিনে এফবিআই, আইসিই এবং ডিইএ-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার শত শত কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছেন। ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীও মোতায়েন করবেন। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকেও অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য আনা হবে।
আইনিভাবে, ওয়াশিংটন ডিসি ১৭৯০ সাল থেকে গঠিত হলেও এবং নিজস্ব মেয়র ও সিটি কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হলেও, এর ওপর কংগ্রেসের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ট্রাম্পের আইনজীবীরা বর্তমানে এই আইন বাতিল করার সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন, যা তাকে মেট্রোপলিটন পুলিশের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ দেবে। এই ক্ষমতা পেতে ট্রাম্প “জরুরি বিশেষ পরিস্থিতি” ধারা ব্যবহার করে রাজধানীতে জননিরাপত্তা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। এই পদক্ষেপের একটি ironic দিক হলো, ট্রাম্প প্রশাসন এ বছর ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অঞ্চলের নিরাপত্তা তহবিল থেকে ৪৪ শতাংশ অর্থ কাটছাঁট করেছে, যা এই ধরনের জরুরি অবস্থার জন্য সহায়ক নয়। এর আগে, ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের পর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমাতে ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, সাধারণত সেনাবাহিনী দেশীয় আইন প্রয়োগে সরাসরি অংশ নিতে পারে না।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তার সমর্থকরা এই পদক্ষেপকে জননিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি বলে মনে করছেন, অন্যদিকে বিরোধীরা এটিকে তার ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার একটি বিপজ্জনক প্রয়াস হিসেবে দেখছেন।