ভেনেজুয়েলার বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে মার্কিন প্রশাসনের ক্ষমতা আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সোমবার থেকে কার্যকর হওয়া নতুন ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপ্রধান এবং তাঁর সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এতে করে ওয়াশিংটনের হাতে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের আরও পথ খুলে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সংগঠনটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তা মূলত কোনো আনুষ্ঠানিক সংগঠন নয় বরং কথিত দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের একটি পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই শব্দটি ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য এবং মাদক পাচারকারীদের যোগসাজশ বোঝাতে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ ঘোষণার ফলে মার্কিন প্রশাসন এখন ভেনেজুয়েলার শাসকের সম্পদ, অর্থনৈতিক কাঠামো এবং তাঁর সরকারের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত সরাসরি প্রাণঘাতী সামরিক শক্তি ব্যবহারের অনুমতি দেয় না। তা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থার আওতায় নতুন এই ঘোষণা ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নমনীয় অবস্থানে নিয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায় জানা যায়, ভেনেজুয়েলায় কথিত যে নেটওয়ার্কটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি মূলত সশস্ত্র বাহিনীর কিছু সদস্যের সঙ্গে মাদক পাচারকারীদের সম্পর্ককে নির্দেশ করে। এই অভিযোগ ঘিরে রাষ্ট্রপ্রধান বরাবরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন। তাঁর সরকারও বহুবার এমন নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে।
১৬ নভেম্বর দেওয়া ঘোষণার আগে থেকেই সামরিক মহড়ার আড়ালে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছিল। পেন্টাগন জানায়, অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার নামের মাদকবিরোধী এক অভিযানের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে এক ডজনের বেশি যুদ্ধজাহাজ এবং প্রায় ১৫ হাজার মার্কিন সেনা ওই অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। এই অভিযানে সন্দেহভাজন নৌযানে হামলা চালিয়ে ৩০ জনের বেশি ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে বলেও মার্কিন সূত্র জানিয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপ্রধানকে ভেনেজুয়েলার ভেতরে সামরিক স্থাপনায় হামলা, সরকারি স্থাপনায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা এবং আরও বিস্তৃত সামরিক বিকল্প সম্পর্কে অবহিত করেছেন। যদিও এখনো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে জনমতের প্রভাবও বিবেচনায় আনা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সিবিএস নিউজ এবং ইউগভের যৌথ জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযানকে অপছন্দ করেন। মাত্র ৩০ শতাংশ এর পক্ষে রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৬ শতাংশ মনে করেন, সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে মার্কিন প্রশাসন এখনো পরিষ্কার কোনো অবস্থান জানায়নি।
মার্কিন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য অবৈধ অভিবাসন এবং মাদক প্রবাহ কমানো। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই পদক্ষেপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, রাষ্ট্রপ্রধান আশা করছেন, বাড়তি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সরাসরি সামরিক আক্রমণ ছাড়াই ভেনেজুয়েলার শাসককে পদত্যাগে বাধ্য করা সম্ভব হবে।
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপ্রধান কূটনৈতিক সমাধানের প্রতি কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়ে মন্তব্য করেন যে ভেনেজুয়েলার শাসক আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। পরে তিনি জানান, উপযুক্ত সময়ে তিনি আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত।



