বিশ্বজুড়ে এ বছর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়ের রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মেলিসা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভয়াবহ গতিতে এর শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে এটি পরিণত হয়েছে বিরল ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণিঝড়ে। বর্তমানে ঝড়টির স্থায়ী বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৭৫ মাইল, যা সঙ্গে থাকা ঝোড়ো হাওয়ার কারণে আরও বেশি গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এত দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা খুবই বিরল। ঝড়টির কেন্দ্রীয় চাপ নেমে এসেছে ৯০১ মিলিবারে, যা সোমবার সন্ধ্যায় ছিল ৯০৯ মিলিবার। সাধারণত কোনো ঝড়ের চাপ যত কমে, তার শক্তি তত বাড়ে। তুলনামূলকভাবে দেখা গেছে, ২০০৫ সালের বিধ্বংসী হারিকেন ক্যাটরিনার চাপ ছিল ৯০২ মিলিবার। সে হিসেবে মেলিসা ক্যাটরিনাকেও ছাড়িয়ে গেছে শক্তির দিক থেকে।
মেলিসার ভয়াবহ প্রভাব ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে পড়তে শুরু করেছে। ঝড়টির বাইরের বৃত্ত বর্তমানে জ্যামাইকার উপকূলে তাণ্ডব চালাচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় উপকূলীয় এলাকা ভেঙে পড়ছে, বহু অঞ্চল বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। সম্ভাব্য ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জ্যামাইকার উপকূলীয় অঞ্চলে বাধ্যতামূলকভাবে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মূল ঝড়টি জ্যামাইকার উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করে জানিয়েছে, মেলিসা ভয়াবহ বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল বাতাস নিয়ে আসছে, যা “ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি” ঘটাতে পারে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কিছু এলাকায় ৪০ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে, সমুদ্রের ঢেউ ১৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, আর স্থায়ী বাতাস ঘণ্টায় ১৬০ মাইল গতিতে বইতে পারে। এসবের ফলে বহু এলাকা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যেই হাইতি ও জ্যামাইকায় তিনজন করে এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে একজনের মৃত্যু ঘটেছে। জীবনহানির পাশাপাশি ঘরবাড়ি, রাস্তা, যোগাযোগব্যবস্থা ও কৃষিক্ষেত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ২টার পরও মেলিসা ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই সক্রিয় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নোয়া হারিকেন হান্টারস ঝড়টির ভেতরে প্রবেশ করে এর বাতাসের গতি ও দিক নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। তারা জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় চাপের এই দ্রুত পতন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, মেলিসা আরও শক্তি সঞ্চয় করছে এবং ভূমিতে আঘাত হানার আগেই এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
বর্তমানে পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চল ও আশপাশের উপকূলীয় দেশগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে অনুরোধ করছে, কারণ ঝড়ের প্রকোপ কতটা ভয়ংকর হবে, তা এখনো সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেলিসা শুধু এ বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ই নয়, সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে উপকূলীয় জনপদ, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।



