যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী পাচারকারী ও যৌন নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইনের নতুন নথিপত্র আবারও চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি কংগ্রেসের হাউস ওভারসাইট কমিটির কাছে জমা পড়া এসব নথিতে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবেরসহ যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নামও উঠে এসেছে।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এপস্টেইন ধনকুবেরকে তাঁর ব্যক্তিগত দ্বীপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নথিতে দেখা যায়, সেই সময় এপস্টেইন তাঁর সূচিতে লিখেছিলেন—“স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, ইলন মাস্ক ৬ ডিসেম্বর দ্বীপে আসবেন (এটা ঠিক আছে তো?)”। তবে ধনকুবের জানিয়েছেন, তিনি এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এদিকে, আরেকটি নথিতে ২০০০ সালের মে মাসের একটি ফ্লাইটের তালিকায় প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম পাওয়া গেছে। সেখানে উল্লেখ আছে, নিউ জার্সি থেকে ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচগামী ফ্লাইটে এপস্টেইন, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েল এবং প্রিন্স অ্যান্ড্রু একসঙ্গে ছিলেন। জানা যায়, সেই সময় প্রিন্স অ্যান্ড্রু যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলেন এবং পরে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন।
এপস্টেইনের সঙ্গে যৌন পাচারচক্র পরিচালনার অভিযোগে ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েলও ২০২১ সালে দোষী সাব্যস্ত হন। শিশু-কিশোরীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার এবং পাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধে এপস্টেইনের নাম আগেও একাধিকবার সামনে এসেছে।
নতুন প্রকাশিত এই নথিতে ধনকুবের ও প্রিন্স অ্যান্ড্রুর পাশাপাশি আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে আছেন অনলাইনভিত্তিক মার্কিন উদ্যোক্তা পিটার থিয়েল এবং সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন। এছাড়া, নথিতে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে সম্ভাব্য এক সকালের নাশতার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ রয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আগে থেকেই বলেছেন, এপস্টেইনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন না।
হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা জানিয়েছেন, এসব নথির মধ্যে রয়েছে ফোনালাপের তালিকা, ফ্লাইটের যাত্রীদের রেকর্ড, আর্থিক লেনদেনের খতিয়ান এবং দৈনিক সময়সূচি। তাঁদের দাবি, প্রতিটি নতুন নথি এপস্টেইনের প্রভাববলয় সম্পর্কে আরও তথ্য উন্মোচন করছে। এজন্য তারা আরও নথি প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পান।
অন্যদিকে, কমিটিতে থাকা রিপাবলিকান সদস্যরা অভিযোগ তুলেছেন যে, এ মামলা নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা প্রকৃত ভুক্তভোগীদের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, অচিরেই পুরো নথি প্রকাশ করা হবে।
প্রসঙ্গত, জেফরি এপস্টেইন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কুখ্যাত ধনকুবের, যিনি শিশু ও কিশোরীদের পাচার করে যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধে জড়িত ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাগারে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর থেকে একের পর এক নতুন নথি বেরিয়ে আসছে, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।