Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeভ্রমণ টুকিটাকিএকাকী ভ্রমণে আত্ম-আবিষ্কার: অভিনেত্রীর অভিজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণামূলক পরামর্শ

একাকী ভ্রমণে আত্ম-আবিষ্কার: অভিনেত্রীর অভিজ্ঞতা ও অনুপ্রেরণামূলক পরামর্শ

একাকী ভ্রমণ—অনেকের কাছে এটি ভয়ের কিংবা অস্বস্তির বিষয়, কিন্তু কারও কাছে এটি আত্ম-আবিষ্কারের যাত্রা। এমনই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, যিনি বহু বছর ধরে নিজের সঙ্গেই বিশ্ব ভ্রমণ করছেন। তাঁর কাছে একাকী ভ্রমণ মানে নিছক ঘুরে দেখা নয়, বরং নিজের ভেতরের মানুষটির সঙ্গে সময় কাটানো।

এই অভিনেত্রী জানান, তিনি প্রায় ২৪ বা ২৫ বছর বয়স থেকেই একা ভ্রমণ শুরু করেছিলেন। প্রথম অভিজ্ঞতাটিই এত ভালো ছিল যে এরপর থেকে প্রতি বছর অন্তত একবার নিজের সঙ্গে ছুটি কাটানোর জন্য তিনি বেরিয়ে পড়েন। তাঁর মতে, একা ভ্রমণ করার কারণ ভিন্ন হতে পারে—কেউ অভিযানের জন্য যায়, কেউ নতুন মানুষ চেনার জন্য, আবার কেউ পরিবার ও কাজের চাপ থেকে দূরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাঁর কাছে একা ভ্রমণ মানে “নিজের সঙ্গে পৃথিবীর পথে চলা।”

অভিনেত্রী, প্রযোজক ও সৌন্দর্যপণ্যের উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যস্ত জীবনের মাঝেও তিনি বলেন, একা ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি নিজেকে রিসেট করেন। তাঁর ভাষায়, “আমি নিজেকে পুনর্গঠিত করি, ধুলো মুছে ফেলি, নিজের ভেতরে নতুন শেখা যোগ করি। সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—সব কিছু পরিকল্পনামতো না গেলেও নিজেকে সামলে নেওয়া এবং আনন্দ খুঁজে নেওয়া।”

এই অভিজ্ঞতা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন নিজের ডকুসিরিজ Solo Traveling, যেখানে তিনটি পর্বে তাঁকে দেখা যাবে মরক্কো, মেক্সিকো এবং স্পেনে ঘুরে বেড়াতে। প্রতিটি পর্বে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর ভ্রমণ রুটিন, যেমন কীভাবে তিনি ব্যাগ গোছান, বিমানে নিজেকে শান্ত রাখেন, এবং একা নতুন কোনো জায়গা উপভোগ করেন।

তিনি বিশ্বাস করেন, একা ভ্রমণ করা এক ধরনের বিলাসিতা, যা নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকে জন্ম নেয়। তাঁর মতে, “নিজেকে জানা, নিজের যত্ন নেওয়া এবং নিজের মতো করে বাঁচা—এগুলো কোনো অপরাধ নয়। বরং এগুলোই জীবনের সৌন্দর্য।”

একটি বিষয়ে তাঁর মজার মন্তব্য, “আমি অনেক লাগেজ নিয়ে যাই, কিন্তু এতে কখনও কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং এতে আনন্দই আসে। তাই যারা ওভারপ্যাকিং নিয়ে লজ্জা পান, তাদের বলব—প্যাক করুন, মন খুলে!”

যারা একা ভ্রমণের চিন্তায় দ্বিধাগ্রস্ত, তাদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ হলো ছোট থেকে শুরু করা। “মঙ্গলবার বা বুধবার সন্ধ্যায় একা ডিনারে যান। পরে শুক্রবার বা শনিবারের ব্যস্ত রাতে চেষ্টা করুন। নিজের অস্বস্তির জায়গা চিহ্নিত করুন, দেখুন কেমন লাগে। যদি ভালো লাগে, বুঝবেন আপনি একা ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত।”

ভ্রমণ গন্তব্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তিনি বলেন, এখন নিরাপত্তা তাঁর প্রথম বিবেচ্য বিষয়। “আমি এমন হোটেল পছন্দ করি যেখানে আলো-হাওয়া ভালো, স্নানঘর আছে, এবং চাইলে সারাদিন ঘরে থেকেও ভালো লাগবে। আর ভালো ফ্রেঞ্চ ফ্রাই থাকলে তো কথাই নেই!”

নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তাঁর পরামর্শ—নিজের পরিচয় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী জায়গা নির্বাচন করা জরুরি। নারী, কৃষ্ণাঙ্গ, LGBTQ+ বা শারীরিকভাবে ভিন্ন সক্ষমতা—যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, আগে গবেষণা করে জেনে নিন কোথায় নিরাপদ বোধ করবেন।

ভ্রমণের সময় কাজও কখনও চলে আসে, তবে তিনি বলেন, “আমি ধীরে ধীরে বার্তা দিই, ফোন সবসময় সঙ্গে রাখি না, মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নেই। আর হ্যাঁ, কখনও কখনও দিনের বেলাতেও পানীয় উপভোগ করি!”

নতুন জায়গায় পৌঁছে তিনি প্রথমেই ব্যাগ আনপ্যাক করেন, তারপর স্নান নেন—যাতে শরীর স্থির হয়। মাঝে মাঝে স্থানীয় ম্যাসাজ উপভোগ করেন। তাঁর অভ্যাস হলো আগেই কিছু জায়গা ও রেস্তোরাঁর তালিকা তৈরি করা, তবে শেষ পর্যন্ত স্থানীয়দের কাছ থেকেই নতুন জায়গা আবিষ্কার করতে ভালোবাসেন।

তিনি বলেন, “আমি ভ্রমণে কোনো দিন অতিরিক্ত পরিকল্পনা করি না। এক-দুটি জায়গা দেখি, বাকিটা সময় নিজের মতো উপভোগ করি। ভ্রমণ শেষে আমি এমনভাবে ফিরে আসি যেন আবার জীবন শুরু করতে পারি।”

ভ্রমণের সবচেয়ে আনন্দদায়ক অংশ তাঁর কাছে স্থানীয় খাবার। মরক্কো ভ্রমণে এমন অনেক স্বাদ তিনি পেয়েছেন যা আগে কখনও পাননি। “আমার মুখে তখন একেবারে নতুন রসনার জগৎ খুলে গিয়েছিল,” বলেন তিনি।

একাকী ভ্রমণের সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি যখন একা হাঁটি, তখন বাতাস, পাখির ডাক, গাড়ির শব্দ—সবকিছু শুনি। প্রতিটি জায়গার শব্দ আলাদা। গাছের পাতায় বাতাসের শব্দ আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিময় সুর।”


RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments