সংবাদ প্রতিবেদন
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বহুল আলোচিত এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রামে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। সম্প্রতি ঘোষিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নতুন এইচ-১বি ভিসার আবেদন জমা দিতে হলে আবেদনপ্রতি ১ লাখ মার্কিন ডলার ফি জমা দিতে হবে। এতদিন যেখানে ফি ছিল প্রায় ২ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলারের মধ্যে, সেখানে এক ধাক্কায় এত বড় অঙ্কের অর্থ নির্ধারণে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান, বিদেশি কর্মী এবং বিভিন্ন দেশ জুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি।
এইচ-১বি ভিসা কী?
এইচ-১বি ভিসা একটি বৈধ অভিবাসন কর্মসূচি, যা মার্কিন নিয়োগদাতাদেরকে স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও অন্যান্য এসটিইএম (STEM) খাতের বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মী নিয়োগের সুযোগ দেয়।
১৯৯০ সালের ইমিগ্রেশন অ্যাক্টের আওতায় চালু হওয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্য ছিলো দক্ষ কর্মীর ঘাটতি পূরণ করা। সাধারণত যে সব পদের জন্য অন্তত স্নাতক ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন, সেইসব বিশেষায়িত ক্ষেত্রে কর্মী আনার জন্যই এই ভিসা চালু করা হয়েছিল।
পরিবর্তনটি কী এবং কাদের ওপর প্রভাব ফেলবে?
ঘোষণার পরপরই স্পষ্ট হয়নি যে এই বাড়তি ফি কেবল নতুন আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য নাকি বর্তমান ভিসাধারী বা নবায়নকারীদের জন্যও কার্যকর হবে। এতে শুরু হয় বিভ্রান্তি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে জানানো হয়—
-
১ লাখ ডলার ফি কেবল নতুন ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
-
সেপ্টেম্বর ২১ তারিখের আগে যেসব আবেদন জমা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম কার্যকর নয়।
-
যারা আগে থেকেই বৈধ এইচ-১বি ভিসাধারী, তাদের নবায়নের ক্ষেত্রে ফি বাড়ছে না।
-
ভিসাধারীরা স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতে পারবেন।
কারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি খাতে বড় কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে আসছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল, গুগলসহ শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো প্রতিবছর হাজার হাজার কর্মীকে এই ভিসার আওতায় আনে। এছাড়া ব্যাংকিং ও খুচরা ব্যবসার বড় প্রতিষ্ঠানগুলিও এর সুবিধাভোগী।
তবে নতুন ফি কাঠামো কার্যকর হলে ভারত ও চীন থেকে আসা উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরাই প্রথম ধাক্কা অনুভব করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসার বড় অংশই ভারতীয় নাগরিকদের কাছে গেছে, আর প্রায় ১০ শতাংশ গেছে চীনের নাগরিকদের কাছে।
ভবিষ্যতের চিত্র
প্রতিবছর এইচ-১বি ভিসার কোটা থাকে সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার—এর মধ্যে ৬৫ হাজার সাধারণ কোটা এবং ২০ হাজার যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত। চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে আবেদন বাছাই করা হয়।
সর্বশেষ লটারির জন্য প্রায় ৩ লাখ ৩৯ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজারের মতো আবেদন নির্বাচিত হয়েছে। নতুন ১ লাখ ডলার ফি বর্তমান লটারিতে প্রভাব ফেলবে না, তবে আগামী বছরের লটারিতে নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হবে।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিভা আনার প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হতে পারে, অন্যদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান হয়তো বাড়তি ব্যয়ভার বহন করতে অনিচ্ছুক হবে।