সিঙ্গাপুর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার হঠাৎ করেই নিম্নমুখী হয়ে পড়ে এবং বিটকয়েন আবারও ৯০ হাজার ডলারের নিচে নেমে যায়। প্রযুক্তি খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক আয় প্রত্যাশা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ডিজিটাল সম্পদের দামে।
বাজার বিশ্লেষকেরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাউড সেবা প্রদানকারী এক প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক মুনাফা ও রাজস্ব পূর্বাভাস প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বাড়তি ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে এআই অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এখনো প্রত্যাশিত লাভ এনে দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতি প্রযুক্তি শেয়ারকে চাপে ফেলে এবং সামগ্রিক ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে অনিশ্চয়তা বাড়ায়।
বৃহস্পতিবারের তথ্যানুসারে, বিটকয়েনের দাম পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে ২.৫ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৯০ হাজার ৫৬ দশমিক ২৪ ডলারে। অন্যদিকে ইথার ৪.৩ শতাংশ পতন হয়ে পৌঁছে ৩ হাজার ১৯৬ দশমিক ৬২ ডলারে। গত দুই দিনের অর্জিত লাভ এক নিমিষেই মুছে যায় এবং এই পতন যুক্তরাষ্ট্রে বুধবারের লেনদেন সেশনে শুরু হওয়া দুর্বলতার ধারাকেই আরও গভীর করে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিলে বাজারে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হলেও ক্রিপ্টো সম্পদ সেই ধারা অনুসরণ করেনি।
এশিয়ার শেয়ারবাজারে একই দিনে পতন দেখা গেছে এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার সূচকসমূহও নিম্নমুখী খোলার ইঙ্গিত দেয়। সিডনিভিত্তিক এক বাজার বিশ্লেষক বলেন, ঝুঁকিসম্পন্ন সম্পদ কিছুটা ভালো থাকার পরও ক্রিপ্টো বাজার তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া দেখায়নি। তিনি মনে করেন, অক্টোবরের বড় ধরনের বিক্রির পর বাজার যে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে তার দৃঢ় প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারকে স্থিতিশীল বলা কঠিন।
এদিকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে বড় ধরনের সংশোধন আনে। প্রতিষ্ঠানটি গত মঙ্গলবার ঘোষণা করে যে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বিটকয়েনের সম্ভাব্য দাম ২ লাখ ডলার স্পর্শ করবে বলে যে ধারণা দেওয়া হয়েছিল তা আর বাস্তবসম্মত নয়। নতুন পূর্বাভাসে প্রতিষ্ঠানটি দাম কমিয়ে ১ লাখ ডলার নির্ধারণ করেছে।
ব্যাংকের ডিজিটাল সম্পদ গবেষণা বিভাগের প্রধান বলেন, বিটকয়েন ক্রয়কারী বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ এখন কমে এসেছে। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে বিটকয়েনের মূল্য বৃদ্ধি এককভাবে ইটিএফ ভিত্তিক বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করবে এবং বাজারের আগের বহুমুখী সমর্থন আর সক্রিয় থাকবে না।
ওই গবেষণা কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন যে করপোরেট পর্যায়ের ক্রয়চাহিদা কমে যাওয়ায় বিটকয়েনের দাম বাড়তে হলে ইটিএফ প্রবাহই প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এতে ভবিষ্যতের মূল্যবৃদ্ধি আগের মতো বিস্তৃত ভিত্তি পাবে না এবং বাজার আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাজার পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, এআই খাত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশা, সুদের হার কমানোর পরও ক্রিপ্টোতে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়া এবং বড় ব্যাংকগুলোর পূর্বাভাস সংশোধন—এসব মিলিয়ে ডিজিটাল সম্পদ বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিটকয়েনসহ অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ গতিপথ এখন মূলত প্রযুক্তিখাতের আস্থা ফিরে আসা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে মনে করা হচ্ছে।



