কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এ প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ ও খ্যাতিমান বিজ্ঞানী। তাঁর মতে, এই প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার ভবিষ্যতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন খাতে এখন এআই এমন সব কাজ সম্পন্ন করতে পারছে, যা একসময় শুধুমাত্র মানুষের দ্বারা করা সম্ভব ছিল। গ্রাহকসেবা থেকে শুরু করে আইনি গবেষণা, এমনকি সৃজনশীল লেখালেখির মতো ক্ষেত্রেও এআই তার সক্ষমতা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তির এই দ্রুত পরিবর্তন মানুষকে নতুন সম্ভাবনার দোরগোড়ায় নিয়ে গেলেও একইসাথে কর্মক্ষেত্রে মানুষের অবস্থান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে এআই বিশেষজ্ঞ বলেন, কর্মসংস্থান হারানো শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নতির ফল নয়; এটি বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থারও প্রতিফলন। তাঁর মতে, সমাজ ও অর্থনীতি এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে দীর্ঘমেয়াদি মানবকল্যাণের চেয়ে স্বল্পমেয়াদি মুনাফাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে, এআই ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে উৎপাদন বাড়ানো ও খরচ কমানো, কিন্তু এর সামাজিক প্রভাব নিয়ে খুব কমই ভাবা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “সমস্যা এআই নয়, বরং আমরা যেভাবে সমাজ ও অর্থনীতিকে পরিচালিত করছি সেটাই প্রকৃত বিপদের কারণ।” তাঁর মতে, যদি সরকার ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্বশীল নীতি গ্রহণ না করে, তবে ভবিষ্যতে প্রযুক্তি মানুষের সহায়তা নয়, বরং প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে।
তবে বিজ্ঞানীর অবস্থান এআই-বিরোধী নয়। বরং তিনি মনে করেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন থামানো সম্ভব নয় এবং তা থামানো উচিতও নয়। বরং এখন প্রয়োজন এমন নীতিমালা তৈরি করা, যা নিশ্চিত করবে—এআইয়ের সুফল যেন সমাজের প্রতিটি স্তরে সমানভাবে পৌঁছায়। যদি সঠিক নীতিমালা গ্রহণ করা না হয়, তবে এই প্রযুক্তি থেকে পাওয়া সুবিধা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতেই কেন্দ্রীভূত হবে, আর বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকারত্ব বা আংশিক কাজের চাপে পড়বে।
বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়েও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, অধিকাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য কেবল মুনাফা বৃদ্ধি করা। শ্রমিকদের কল্যাণ ও মানবিক মূল্যবোধ সেখানে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে, সমাজকে সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে—যেখানে প্রযুক্তি মানুষের জীবনমান উন্নত করার বদলে তা কেড়ে নিতে শুরু করবে।
এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা যেমন বিপুল, তেমনি এর ঝুঁকিও কম নয়। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতা বজায় রাখা এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞের ভাষায়, “আমরা যদি এআইকে কেবল মুনাফার হাতিয়ার হিসেবে দেখি, তবে সমাজ নিজের তৈরি ফাঁদেই আটকে যাবে।”
বিশ্বজুড়ে এখন যে হারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে, তা নিয়ন্ত্রণে না আনলে আগামী দশকেই কর্মসংস্থানে বড় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। প্রযুক্তি মানুষের সহায়ক না হয়ে প্রতিস্থাপনকারী হয়ে উঠলে এর প্রভাব পড়বে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক ভারসাম্যের ওপর।



