উদ্ভিজ্জ খাদ্যকেন্দ্রিক জীবনধারা এখন অনেকের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কেউ সম্পূর্ণ ভেজিটেরিয়ান, আবার কেউ ভেগান পথ অনুসরণ করেন। যারা ভেজিটেরিয়ান, তারা মাছ–মাংস না খেলেও দুধ বা ডিম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে ভেগানদের অনেকেই প্রাণিজ উৎসের খাদ্য একেবারেই পরিহার করেন, এমনকি ডিম ও প্রাণীর দুধও গ্রহণ করেন না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে—এ ধরনের খাদ্যাভ্যাসে কি প্রোটিনের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে? আর থাকলে তা কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব?
প্রোটিন মানুষের দেহগঠন, পেশীর শক্তি, হরমোন উৎপাদনসহ নানান কাজে অপরিহার্য। তবে কোন উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে দেহে পৌঁছানো অ্যামিনো অ্যাসিডের মান ও পরিমাণ। তাই প্রোটিনের উৎস সম্পর্কে বোঝাপড়া থাকা জরুরি।
প্রোটিন মূলত দুই ধরনের—প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জ। প্রাণীজ উৎসে পাওয়া প্রোটিনকে ধরা হয় প্রথম শ্রেণির। কারণ এতে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব মৌলিক অ্যামিনো অ্যাসিড উপস্থিত থাকে। মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ এই শ্রেণির সাধারণ উৎস। অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ উৎসের প্রোটিন দ্বিতীয় শ্রেণির, কারণ এতে কোনো না কোনো অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি থাকে। তবে একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শস্য, ডাল, বীজ ও বাদাম খেলে এই ঘাটতি সহজেই পূরণ করা যায়। যেমন খিচুড়ি বা হালিমে নানা রকম দানা–শস্য থাকার কারণে প্রাণীজ উপাদান ছাড়াই প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া সম্ভব।
প্রোটিনের মান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পরিমাণও। প্রতিদিন নিজের প্রতি কেজি ওজনের জন্য অন্তত এক গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। অর্থাৎ কারও ওজন যদি ৬০ কেজি হয়, তাহলে দৈনিক অন্তত ৬০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা দরকার। তাই কোন খাবার থেকে কতটা প্রোটিন পাওয়া যায়, সে ধারণা থাকা আবশ্যক।
যারা মাছ–মাংস খান না, তাদের জন্য দুধ ও ডিম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে। এক গ্লাস দুধে থাকে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন এবং একটি বড় ডিমে থাকে ৬ গ্রাম প্রোটিন। দুধ বা ডিম দিয়ে তৈরি নানা পদ খেয়েও দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা আংশিক পূরণ করা যায়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উৎস—যেমন ডাল, পনির, ছানা বা ডিমের সঙ্গে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন মিশিয়ে খেলে আরও ভালো মানের প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। এতে প্রোটিনের পরিমাণ যেমন বাড়ে, তেমনি অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতিও কমে।
অন্যদিকে ভেগান জীবনধারায় যারা কোনো প্রাণীজ খাদ্য গ্রহণ করেন না, তারাও চাইলে কেবল উদ্ভিজ্জ উৎস থেকেই পর্যাপ্ত প্রোটিন পেতে পারেন। সয়া, টোফু, বাদাম, বীজ, বিভিন্ন ধরনের ডাল, শিম, সবজি ও শস্য তাদের প্রধান ভরসা। ১০০ গ্রাম সয়া থেকে পাওয়া যায় প্রায় ৩০ গ্রাম প্রোটিন। টোফুতে মেলে ৪ গ্রামের কিছু বেশি। সয়া দুধে থাকে প্রতি গ্লাসে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন। রাজমা, শিম, মটর, মসুর ডাল, চানা ও ডাবলি—এসবের প্রতি ১০০ গ্রামে কমপক্ষে ৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে। তবে ডাল পাতলা করে রান্না করলে প্রোটিনের ঘনত্ব কমে যায়, তাই তা মাথায় রাখা উচিত।
বাদাম ও বিভিন্ন বীজও ভালো উৎস। প্রতি ৩০ গ্রামে ৪ গ্রামের বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়া কিনোয়া রান্নার পর প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় ৪ গ্রামের বেশি প্রোটিন। ওটসেও প্রতি ১০০ গ্রামে মেলে প্রায় ৩ গ্রাম। পালংশাক, মিষ্টি আলু, কলা, পেয়ারা ও ব্রকলির মতো সবজিতেও সামান্য প্রোটিন রয়েছে, যা মোট গ্রহণের হিসাবকে সমৃদ্ধ করে।
সুতরাং ভেজিটেরিয়ান বা ভেগান যেই খাদ্যাভ্যাসই অনুসরণ করা হোক না কেন, পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উৎস মিলিয়ে খেলে দৈনিক প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাওয়া সম্পূর্ণ সম্ভব। সচেতন খাদ্যাভ্যাসই এতে প্রধান ভূমিকা রাখে।



