Sunday, October 5, 2025
spot_img
Homeবিজনেসউদ্ভাবনী দৌড়ে শীর্ষে চীন, পেছনে যুক্তরাষ্ট্র—শীর্ষ দশে কারা আছেন?

উদ্ভাবনী দৌড়ে শীর্ষে চীন, পেছনে যুক্তরাষ্ট্র—শীর্ষ দশে কারা আছেন?

বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। গবেষণা, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক পেটেন্ট ফাইলিং এখন দেশগুলোর শক্তি প্রদর্শনের অন্যতম বড় সূচক। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পেটেন্ট কার্যক্রমের প্রতিবেদনে ২০২৫ সালের বৈশ্বিক উদ্ভাবনী মানচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে চীন, আর দ্বিতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র।

আন্তর্জাতিক পেটেন্ট সুরক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হলো পেটেন্ট কো–অপারেশন ট্রিটি (পিসিটি), যা বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে একজন উদ্ভাবক বা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে বহু দেশে পেটেন্টের জন্য আবেদন করতে পারেন।

ডব্লিউআইপিওর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পিসিটির আওতায় প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০টি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আবেদন জমা পড়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে ২০২৫ সালের উদ্ভাবনী খাতের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকা।

প্রতিবেদন অনুসারে, শীর্ষে থাকা চীন গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি দেখালেও সম্প্রতি প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ সরকারি ভর্তুকি হ্রাস এবং মান নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা। তবুও দেশটির উদ্ভাবনী খাত ৫জি, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও টেলিকম সেক্টরে সবচেয়ে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। এ ছাড়া, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পেটেন্ট দাখিলকারী প্রতিষ্ঠানও চীনের একটি প্রযুক্তি জায়ান্ট।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এখনও উদ্ভাবনের এক বড় শক্তি। সেমিকন্ডাক্টর, লাইফ সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মতো খাতে দেশটি প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক গবেষণাতেও দেশটি শীর্ষে। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবনের জন্য ব্যাপক পরিচিত।

তৃতীয় স্থানে জাপান, যারা ৪৮,৩৯৭টি পেটেন্ট দাখিল করেছে। দেশটি মাননির্ভর উদ্ভাবনের জন্য পরিচিত। রোবোটিকস, বিজ্ঞান এবং ইমেজিং প্রযুক্তিতে জাপান বিশ্বনেতা। টোকিও–ইয়োকোহামা অঞ্চল এখনো বিশ্বের বৃহত্তম পেটেন্ট কেন্দ্র হিসেবে অবস্থান করছে।

চতুর্থ অবস্থানে দক্ষিণ কোরিয়া, ২৩,৮৫১টি পেটেন্ট দাখিল করে। দেশটির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে ইলেকট্রনিকস, সেমিকন্ডাক্টর, ডিসপ্লে টেকনোলজি এবং ব্যাটারি খাতের শক্তি। শক্তিশালী গবেষণা নীতি ও রপ্তানিমুখী অর্থনীতি তাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করছে।

ইউরোপের মধ্যে জার্মানি বিশেষভাবে এগিয়ে রয়েছে। ১৬,৭২১টি পেটেন্ট দাখিলের মাধ্যমে দেশটি অটোমোবাইল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে প্রভাবশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। যদিও এখন দেশটি ডিজিটাল ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে রূপান্তরের চাপে রয়েছে।

ফ্রান্সও উদ্ভাবনে এগিয়েছে। দেশটির গবেষণা মূলত সবুজ প্রযুক্তি, মহাকাশ খাত ও শিল্প স্বয়ংক্রিয়করণে কেন্দ্রীভূত। সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।

যুক্তরাজ্য ৫,৮৬১টি পেটেন্ট দাখিল করে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। দেশটি স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি, ফিনটেক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। এ ছাড়া নারী উদ্ভাবকের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও যুক্তরাজ্য শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সুইজারল্যান্ড ৫,৩২৪টি পেটেন্ট দাখিল করে নবম স্থানে রয়েছে। ওষুধ, রাসায়নিক ও মেডিকেল ডিভাইস খাত তাদের প্রধান শক্তি। দেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোই এ ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখছে।

ভারত ৪,৫৫২টি পেটেন্ট দাখিল করে তালিকায় এগিয়েছে এবং একধাপ বড় সাফল্য দেখিয়েছে। দেশটির মূল অগ্রগতি ওষুধ, বায়োটেক, সফটওয়্যার ও ইলেকট্রনিকস খাতে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও মেক ইন ইন্ডিয়ার মতো জাতীয় উদ্যোগ এই প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

নেদারল্যান্ডস ৪,৩১০টি পেটেন্ট দাখিল করে শীর্ষ ১০–এ স্থান করে নিয়েছে। সেমিকন্ডাক্টর, কৃষিপ্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে দেশটি শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। তাদের পেটেন্ট আবেদনগুলোর বড় অংশই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফল।

সব মিলিয়ে, এই প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার নতুন মানচিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments