জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উচ্চকক্ষ গঠন সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রক্রিয়া প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছেন, উচ্চকক্ষ গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে (Proportional Representation) প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি।
আজ দুপুর আড়াইটায় জাতীয় নাগরিকদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। এই পরিষদ গঠন হবে সংবিধান সংস্কারের জন্য, যা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রথম অধিবেশন শুরুর ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করবেন। সংবিধান সংস্কার শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। গঠিত উচ্চকক্ষের মেয়াদ থাকবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত।
ভাষণের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠক করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর সম্পন্ন হওয়ার পর এটি ইতিমধ্যেই গেজেট নোটিফিকেশন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, আদেশে সংবিধান বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং গণভোটের আয়োজনের পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, যদি গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ আসে, তবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। এই পরিষদ সংবিধান সংশোধনের কাজ সম্পন্ন করার পর উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা এই আদেশে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে গণভোট আয়োজন এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা সকল বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনেই একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতোই, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।”
উচ্চকক্ষ গঠনের এই প্রক্রিয়া জনগণের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করবে। নির্বাচিত প্রতিনিধি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা একযোগে দায়িত্ব পালন করবে, যা সংবিধান সংস্কারের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই পদক্ষেপ দেশের সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এছাড়া তিনি নিশ্চিত করেছেন, ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠনের পদ্ধতিতে রাজনৈতিক অংশীদারিত্ব সমানভাবে প্রতিফলিত হবে। এতে সকল প্রার্থীর এবং দলের ভোট অনুযায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।
তিনি জনগণকে আশ্বাস দিয়েছেন, সংবিধান সংস্কার ও উচ্চকক্ষ গঠনের এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, প্রক্রিয়াগত এবং সুনির্দিষ্ট নিয়মে বাস্তবায়িত হবে। সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্য হলো দেশের আইন ও শাসন কাঠামোর আধুনিকায়ন, যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও মজবুত হয়।



